Uncategorized

ঋষিকে হারিয়ে দিয়েছিলেন রাজেশ?

যদিও দুজনের রুপোলি পর্দার সময়কাল সামান্য কিছু আগে পরে, এবং দুজনেই আলাদাভাবে মহিলা ভক্তদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন, তবুও বাস্তব জীবনে হয়েছিল এমনটাই।

সময়টা ছিল ষাটের দশকের শেষ আর সত্তরের শুরু। হিন্দী ছবির সমস্ত মহিলা দর্শক কখনও না কখনও নিজেকে রাজেশ খান্নার স্ত্রী কিংবা বান্ধবীরূপে কল্পনা করতেন। আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে এমনই ছিল রাজেশের সুপারস্টার ইমেজের ক্যারিশমা। সেই জাদুতে মজেছিল মুম্বইয়ের (তখন বম্বে) এক সদ্য কিশোরীও। সে নিজে তখন বিখ্যাত পরিচালকের ছবির নায়িকা হতে চলেছে। শোনা যায় ‘ববি’ ছবির সেটেই ডিম্পলকে প্রথম দেখেছিলেন রাজেশ। সেই দেখা থেকেই প্রেম এবং খুব দ্রুত বিয়ের সিদ্ধান্ত, এমনকি ববির শুটিং শেষ হবার আগেই। ডিম্পলকে তখনও দেখেনি হিন্দী ছবির দর্শক। রাতারাতি তার সঙ্গে সুপারস্টারের এমন বিয়ের খবরে রাজেশের সেই সময়ের বান্ধবী অঞ্জু মহেন্দ্রুর মতো ধাক্কা খেয়েছিল সারা দেশও।

কিন্তু কীভাবে ৩১-এর সুপারস্টার এক ১৫ বছরের নবাগতার প্রেমে পাগল হলেন? বিশিষ্ট সাংবাদিক সুভাষ ঝা সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন যে সেই সময় ডিম্পলের বাবা চুনিলাল কাপাডিয়া রাজেশের সঙ্গে মেয়েকে পাঠিয়ে দেন কোনও এক মনোরম সৈকতাবাসে। ডিম্পল তখন সদ্য কিশোরী, তার সামনে বলিউড সাম্রাজ্যের রাজপুত্র, চোখে হাজারো স্বপ্ন, ‘না’ বলার ক্ষমতা ছিল না তাঁর। রাজেশের অন্ধ ভক্ত ছিল সে নিজেও। শোনা যায় দুজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরমুহূর্তেই সমুদ্রে একটি আংটি ফেলে দেন ডিম্পল। এই আংটি ডিম্পলের হাতে কোনও একসময় পরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর প্রথম ছবির নায়ক ঋষি কাপুর। রাজেশের জাদুর সামনে ম্লান হয়ে গিয়েছিল ঋষির ভালোবাসার উপহার।

চুনিলালের জুহুর বাংলোতে, ১৯৭৩ সালের মার্চে রাতারাতি বিয়ে করেন রাজেশ-ডিম্পল। এদিকে ‘ববি’র শুটিং তখনও চলছে। বিয়ে সেরে সেটে ফিরে এলেন ডিম্পল। ততদিনে শুটিংয়ের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। বিয়ের আগে রাজেশ যখন-তখন ‘ববি’র সেটে আসতেন। রাজেশের গাড়িতে বসে দুজনে মিলে গল্প করতেন । শটের সময় হয়ে যেত অথচ ডিম্পলের দেখা নেই। রাজ কাপুর বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারতেন না কারণ ডিম্পলকে ছাড়া ছবি শেষ করা যাবে না।

অগত্যা বিয়ের পর ডিম্পল ফিরলে তিনি আবার শুটিং শুরু করেন। এদিকে দেখা দিল আর এক বিপত্তি। ডিম্পলের হাতে তখন নতুন বিয়ের মেহেন্দি, ক্যামেরায় তা ধরা পড়লে মুশকিল। ফলে বেশ কিছু দৃশ্যে ডিম্পলের হাত দেখানো গেল না। বদল করতে হলো চিত্রনাট্য। গোটা ঘটনায় বেজায় বিরক্ত হয়েছিলেন রাজ। তবে ১৯৭৩-এ মুক্তি পেয়ে ‘ববি’ সুপারহিট হলো। ডিম্পল পেলেন সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। 

কিন্তু তারপর? ডিম্পল কি শুধুই আংটি ফেলেছিলেন সমুদ্রে? নাকি একই সঙ্গে নিজের কেরিয়ারও ছুঁড়ে ফেলেছিলেন আরব সাগরের জলে? সফল অভিনেত্রী হয়ে ওঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে শিকড়েই নষ্ট করলেন তিনি শ্রীমতি খান্না হওয়ার আশায়। প্রথম ছবি মুক্তির পর ঘোরতর সংসারী হয়ে গেলেন ডিম্পল।  ‘ববি’ মুক্তির তিনমাসের মাথায় মা হলেন তিনি। চার বছরের মধ্যে দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হলো। ডিম্পলের বয়স তখন কুড়ি। কিন্তু তাঁর বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। দুই মেয়ে হওয়ার পর রাজেশ ও ডিম্পল আর একসঙ্গে থাকেননি। যদিও রাজেশের মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তাঁরা আইনত স্বামী স্ত্রী ছিলেন।

ডিম্পল আবার ছবির জগতে ফিরেছিলেন বিয়ের এগারো বছর পরে, ১৯৮৪ সালে। ছবির নাম ছিল ‘জ়খমী শের’। এর পরের বছর ঋষির সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘সাগর’ আবারও সুপারহিট হয়। ২০১৩-তে ‘ববি’র চল্লিশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে এসে ঋষির সম্পর্কে ডিম্পল জানান, চার দশক আগে তিনি তাঁর হৃদয় হারিয়েছিলেন এই মানুষটির কাছে, যা আজও ফেরত পাননি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *