Flashback

উভয় সঙ্কটে রাখি মজুমদার?

স্টুডিয়ো সংবাদদাতা: রাখি (Rakhee) মজুমদার আর পারছেন না! পারছেন না মানে আর পেরে উঠছেন না। শেষ পর্যন্ত কি মায়ের রোল ছাড়া কিছুই নেই? আসলে বম্বের ফিল্মি দুনিয়া পুরোপুরি পুরুষশাসিত। শুধু বম্বে কেন, গোটা দেশেই। তাই দেব আনন্দ যথেষ্ট বয়সে এখনও অল্পবয়সী নায়িকাদের সঙ্গে ছবি করতে পারেন। ধর্মেন্দ্র এখনও বিরাট লাফঝাঁপ দেখাতে পারেন। কিন্তু ওঁদেরই বয়েসের কোনও নায়িকার পক্ষে এই ধরনের সুযোগ পাওয়া খুবই দুষ্কর। তা তাঁর যতই অভিনয়ক্ষমতা থাকুক না কেন।

রাখিও ঠিক এরকম অবস্থার মুখে পড়েছেন। হেমা মালিনী (Hema Malini) ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই অন্য লাইন ধরে নিয়েছেন। শর্মিলা ঠাকুরও তাই। একমাত্র রাখি পড়েছেন বিপদে। অথবা তাঁর দিনগুলো ক্রমেই সংখ্যাঙ্কিত হয়ে আসছে। এখন যে বয়সের নায়কেরা ছবিতে আসছেন, তাঁদের বিপরীতে রাখির নায়িকা হওয়া কোনওমতেই সম্ভব নয়। এটা বোধহয় বেশি কথায় না বললেও চলে।

আরও পড়ুন: ‘পচা দুর্গন্ধ ছড়ালে, প্রতিবেশীরাই এসে দাহ করবে’

অন্যদিকে রাখিকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়াটাও মুশকিল। এই নিয়ে নানারকম কথাবার্তা, আলোচনা চলছে। সম্প্রতি জনৈক পরিচালক বলেছেন, রাখির কিছু বাধা আছে তা ওঁর বোঝা উচিত। কমবয়সী নায়িকার রোলে ওঁকে মানবে না, এটা বোঝা দরকার। নিজের বয়সটা স্বীকার করে নিলে ক্ষতির কিছু নেই। সায়রা বানুও ব্যাপারটা মেনে নিয়েছেন। রাখিরও মেনে নেওয়া উচিত।

আসল কথা হলো, ভারতবর্ষে ৫০ বছরের নায়কের সঙ্গে ১৬ বছর বয়সী নায়িকার জুটি যত সহজে মেনে নেওয়া হয়, বিপরীত ক্ষেত্রে তা হয় না। তাছাড়া, নতুন যাঁরা আসছেন, তাঁদের দেখে রাখির মতো অভিনেত্রীর ঘাবড়ে যাওয়ারও কিছু নেই। মা চরিত্রে অভিনয় করতেই হবে, এমন কোনও কথাও নেই।

আরও পড়ুন: ‘অতটা অ্যাপিল করেনি উত্তমকুমারের অভিনয়’

আরেক পরিচালক বলেছেন, নায়িকা সাজা আর রাখির পক্ষে সম্ভব নয়। বরং পরিণত বয়সের রোমান্টিক নায়িকা হতে পারেন। ‘দুসরা আদমী’ ছবিতে কমবয়সী ছেলের প্রেমে মাঝবয়সী প্রেমিকার ভূমিকায় রাখি চমৎকার অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে, রাখিকে আবার পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়াও মুশকিল বলে মনে করেন সেই পরিচালক।

নূতন হয়তো মা সাজতে পারেন কিন্তু রাখির পক্ষে তা সম্ভব নয়। কারণ রাখি নূতনের থেকে বয়সে ছোট। নূতন, ওয়াহিদা রহমান, নন্দা এঁরা রাখির চেয়ে বয়সে বড়। কাজেই তাঁদের মা সাজা স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন: শেষ নাহি যে

জয়া বচ্চন ফিরে এসেছেন বলেও এই পরিচালকের ধারণা। তবে রাখির বিব্রত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি মনে করেন কারণ ‘সিলসিলা’র পর জয়ার পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব হবে না। আবার রেখাও সম্ভবত অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে আর কোনও ছবি করবেন না। তার মানে অমিতাভের বিপরীতে নায়িকা হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রাখির থেকে যাচ্ছে। অবশ্য অমিতাভও বয়স্ক হয়ে যাচ্ছেন ক্রমশ!

বম্বেতে কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রীর বেকার থাকার কথা নয়। নায়ক-নায়িকা ছাড়াও চব্বিশ রকম ভূমিকায় কাজ করার চাকরি সবসময়ই খালি থাকে বছরে ৬০০ ছবির জন্য। টাকার, মানে পারিশ্রমিকের অঙ্কটা একটু কমে যাবে, এই আর কী।

আরও পড়ুন: মেয়ের মৃত্যুসংবাদ! তবু শট দিয়ে গেল জহর

সম্প্রতি রাখি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “বিছুদিন আগে একটা দৈনিক কাগজের রবিবারের পাতায় লেখা হয়েছিল আমি নাকি মদ খেয়ে মোটা হয়ে গিয়েছি। এ সমস্ত একেবারে বাজে কথা।”

আসলে রাখির শরীরে নাকি জল জমে!

“আরও একটা কথা প্রায়ই শুনি, অমিতাভ নাকি আমার সঙ্গে কোনও ছবি করতে চায় না। এটাও বাজে কথা। হৃষীদার (হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়) একটি ছবিতে আমি আর অমিত একসঙ্গে কাজ করছি। কমবয়সীদের সঙ্গে আমি এই প্রথম ছবি করছি না। ‘হমারে তুমহারে’, ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ করেছি। তাছাড়া কমবয়সীদের সঙ্গে কাজ করতে আমার কোনও অসুবিধা নেই। ওদের চেয়ে আমাকে বেশি বয়সী বলে কোনওমতেই মনে হয় না।”

আরও পড়ুন: ট্রিলজির শিরোপা দিতে এত কার্পণ্য কেন?

রাখি দাবি করছেন ‘শান’ ছবিতে তাঁর রোল ছোট হলেও সবচেয়ে সেরা। তিনি আরও একটি কথা পরিষ্কারভাবে বলেছেন। রোল ছোট হোক বা বড়, তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁর একটি শর্ত আছে, সেই ছবিতে যেন অভিনয় করে দেখাবার সুযোগ থাকে। ছ’বছরের বাচ্চা সাজা ছাড়া অন্য যে কোনও রোল রাখি গ্রহণ করতে নারাজ নন। তাঁর আরও একটি অসুবিধা নাচ না জানা। যার জন্য সুযোগ পেলেই এবার তিনি নাচ শিখে নেবেন বলে জানিয়েছেন।

আর দক্ষিণ ভারতীয় ছবি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “সত্যি কথা বলতে কী, দক্ষিণী ছবিতে কাজ করার আগ্রহ আমার নেই। অবিশ্যি ওরা লোক ভালো, পয়সাকড়িও ঠিকমতো দেয়। কিন্তু সমস্যা হলো ওরা এত বেশি চেঁচামেচি আর চিৎকার করে অভিনয় করে যে আমার পক্ষে তা হজম করা বড় কষ্টসাধ্য। যার জন্য দক্ষিণী ছবি আমি সবসময় এড়িয়ে যাই।”

যে সব তারকাদের সঙ্গে রাখি কাজ করতে ভালোবাসেন, তাঁরা হলেন অমিতাভ, শশী কপূর (Sashi Kapoor) ও সঞ্জয় খান (Sanjay Khan)। কমবয়সীদের মধ্যে মিঠুন চত্রবর্তী (Mithun Chakraborty) ও আমজাদ খান (Amjad Khan) রাখির প্রিয়। মজ়হর খান, সুরেশ ওবেরয়দের সম্পর্কেও রাখির ধারণা খুব ভালো।

আরও পড়ুন: ”বাঞ্ছারামের বাগান’ না করা মস্তবড় ভুল ছিল’

ছবিতে এরপর রাখি কীভাবে থাকতে চান, সেই সম্পর্কে বলেছেন, “ভালো রোল যতদিন পাই বা পাবো, আমি ছোটবড় কিছু বাছব না। সুচিত্রা সেনকে আমি প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি। মহিলা প্রচুর অফার পান প্রত্যহ। কিন্তু মনের মতো রোল না পেলে দু’বছর বসে কাটিয়ে দেবেন। কিন্তু বাজে রোল করবেন না।”

বাজে রোল বলতে রাখি কী বোঝাতে চাইছেন তা পরিষ্কার করে বলেননি।

১৯৮১ সাল রাখির পক্ষে ভালো যাওয়ার কথা। আগামী বছর তাঁর অভিনীত অনেকগুলো ছবি পরপর মুক্তি পাবে এবং প্রত্যেকটি চরিত্র একের থেকে আলাদা। কাজেই রাখি পারছেন কি না তা ১৯৮১ সালেই জানা যাবে।

প্রথম প্রকাশ: ঘরোয়া, মাঘ ১৩৮৭


Edited and Published by Prabuddha Neogi

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন

WBFJA

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *