তথ্যচিত্রে সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়
বাল্মীকি চট্টোপাধ্যায়: কী কাণ্ড! ৫৫ মিনিটের ছবি ২৭ মিনিটে শেষ! রেগে আগুন পরিচালক গৌতম ঘোষ (Goutam Ghose)। কিন্তু কিছু করার নেই। ছবি তখন মাঝপথে। গৌতম ঘোষের অসন্তোষ বিফলে গেল। ভুল অকাদেমীর কুশলীদের। গৌতম ঘোষের ছবির একটা সংক্ষিপ্ত পর্ব ওঁরা তৈরি করেছিলেন কোনও সাহিত্য আসরে দেখানোর জন্য। ভুল করে এখানে সেই ছবি চালিয়ে দিয়েছে। ক্ষোভে ফেটে না পড়লেও খারাপ লাগাটা চাপতে পারলেন না পরিচালক।
নন্দনে ১৯ সেপ্টেম্বর সদ্য প্রয়াত সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়ের (Prafulla Roy) ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র দেখানোর আয়োজন করেছিল দে’জ় পাবলিশিং। প্রধাণ আকর্ষণ গৌতম ঘোষের এই ছবি। আলোচক ছিলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রফুল্ল রায়ের দুই কন্যা দোলা ও মনা, প্রকাশনার তরফ থেকে সুধাংশুশেখর দে এবং গৌতম। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার অপু দে।
আরও পড়ুন: মোটামুটি একটা মারপিটের সিনেমা হওয়ার উপযুক্ত ছিল?
বাংলা সাহিত্য অকাদেমীর কিছু কর্তাব্যক্তি বছর পাঁচেক আগে একবার প্রফুল্লবাবুর কাছে যান। তাঁর ওপর একটি তথ্যচিত্র করার আর্জি নিয়ে। পত্রপাঠ সে আবেদন নাকচ হয়ে যায়। অকাদেমীর লোকজন বারংবার অনুরোধ করায় তিনি বলেন, যদি এই ছবি গৌতম ঘোষ পরিচালনা করেন তাহলে তিনি রাজি আছেন।
তাই হল। সাহিত্য অকাদেমীর লোকজন এসে ধরলেন গৌতম ঘোষকে। তখন সবে করোনাকাল পার হয়েছে। প্রফুল্লদার শরীরও জুতের নেই। সময় সুযোগ বুঝে শরীরগতিকের খবর নিয়ে এক বছর ধরে গৌতম এই ছবি করেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রফুল্ল রায়কে নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন তাঁর গল্প উপন্যাসের লোকেশনে। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দণ্ডকারণ্য, আন্দামান, নাগাল্যান্ড। কিন্তু বাধ সেধেছিল তাঁর শরীর, করোনা পরবর্তী ঢেউ।
আরও পড়ুন: ঋত্বিক ঘটকের পরবর্তী ছবির নায়িকা তাঁর কন্যা?
গৌতম আক্ষেপ করে বললেন, “একজন বোহেমিয়ান সাহিত্যিক। প্যান-ইন্ডিয়ান সাহিত্যিক। কত জায়গা দেখেছেন। কত মানুষ নিয়ে লিখেছেন। আমি সেই সব জায়গায় শুটিং করতে পারলাম না। এই ছবি মূল্যে উৎকৃষ্ট কখনওই নয়। তবে তথ্যসমৃদ্ধ। এইটুকুই যা। আক্ষেপ আরও আছে। প্রফুল্লদাকে এই ছবিটা দেখাতে পারলাম না।”
নন্দন ৩ প্রেক্ষাগহে সীমিত দর্শক। প্রফুল্ল রায়ের গুণগ্রাহী। সবাই আবদার করলেন গৌতম ঘোষ ও দে’জ় পাবলিশিংয়ের সুধাংশুবাবুকে। তাহলে আর একদিন হয়ে যাক, পুরো ছবি দেখার আয়োজন। আপাতত রাজি হলেন সবাই।

কিন্তু ১৯৭০-এর এক সকালে কারওর কথা ফেলতে না পারা মানুষ প্রফুল্লদা রাজি হননি। উত্তমকুমার তাঁর বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন। আঁৎকে উঠেছিলেন সাহিত্যিক। বলেছিলেন, অসম্ভব ব্যাপার। আপনি এলে পাড়া ভেঙে পড়বে। আপনাকে সিকিওরিটি দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই। বরং আপনি বলুন, কোথায় গিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে হবে! কোনও হোটেল বা বাড়ি।
শেষ পর্যন্ত উত্তমকুমারের বাড়িতেই গিয়েছিলেন প্রফুল্লবাবু। তাঁর উপন্যাস ‘এখানে পিঞ্জর’ নিয়ে ছবি করতে চেয়েছিলেন উত্তম। চেয়েছিলেন লেখকের মতো বেশভূষা পরতে। খাদির পাঞ্জাবি। হাতাটা একটু গুটিয়ে হাল্কা তুলে রাখা। অবিকল তাই করেছিলেন।
আরও পড়ুন: উত্তমের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার সুপ্রিয়ার
প্রফুল্ল রায়ের গল্প উপন্যাস নিয়ে বহু তর্কিত বিতর্কিত বাংলা ছবি হয়েছে। জাতীয়, আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে সেই সব ছবি। ‘এখানে পিঞ্জর’ প্রথম ছবি। তারপর ‘বাঘবন্দি খেলা’, ‘মোহনার দিকে’, ‘একান্ত আপন’, ‘চরাচর’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘চুনাহ’ (হিন্দি), ‘রাজা’, ‘চাঁপিয়া’ (হিন্দি), ‘নাগমতি’, ‘খাঁচা’, ‘গোল’, ‘ক্রান্তিকাল’, ‘পিতৃভূমি’, ‘জন্মভূমি’, ‘অন্বেষণ ভোজ’, ‘টার্গেট’, ‘রহগির’, ‘অতিথি’, ‘নসিহত’। টেলিফিল্ম ‘আদমি অউর অউরত’। সিরিয়াল ‘আমাকে দেখুন’, ‘আমার নাম বকুল’, ‘মানুষি’, ‘এবার বাতাস বয়’। আরও কিছু।
সেই যুগে বাংলা ছবিতে সাহিত্যিকদের কদর ছিল। আজ আর তত দর নেই। প্রযোজক, পরিচালকরা এত ভাল লিখছেন আজকাল। যাই হোক।
Edited and Published by Prabuddha Neogi
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন





