Features

বিনয় বসুর মায়ের হাতে ভূমিষ্ঠ, শুভ জন্মদিন টিটোদা

বাল্মীকি চট্টোপাধ্যায়দিনটি ছিল ২১ আষাঢ়, ১৩৫১। ইংরেজি ৫ জুলাই, ১৯৪৪। জামশেদপুর তখন বিহার রাজ্যের অধীন। সেই জামশেদপুরের ৪৭ পি রোড, বিষ্টুপুরে জন্ম হল ভবিষ্যতের এক তারকা-অভিনেতার। দীপঙ্কর দে (Dipankar De)। বাবা বিনয়েন্দ্রকুমার দাম, মা বীণা। এক পিসি ছিলেন। তাঁর নাম হৈমবতী। দীপঙ্কর দের মা বীণার সঙ্গে সেই পিসি খুব খারাপ ব্যবহার করতেন। মারধর করতেন। একটু বড় হয়ে দেখেছেন দীপঙ্কর। শুধু বাবাকে দেখেননি।

সেই সময়কার পারিবারিক নিয়ম অনুযায়ী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বাপের বাড়ি চলে আসতেন মেয়েরা। বীণাও এসেছিলেন। আষাঢ় মাস। আকাশে মেঘের আনাগোনা। হঠাৎ গর্ভযন্ত্রণা শুরু হল বীণা দেবীর। সঙ্গে-সঙ্গে খবর গেল তাঁদের এক পরম আত্মীয়ের কাছে। সেই অঞ্চলেরই ধাত্রী মা। সব কাজ ফেলে ছুটে এলেন তিনি। আঁতুড়ঘরে ঢুকে গেলেন। কিছুক্ষণ পরেই শিশুর কান্নার আওয়াজে ভরে উঠল উঠোন। যে জন্মধাত্রী মা পৃথিবীর আলো দেখালেন দীপঙ্করকে, তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনয়-বাদল-দীনেশ ত্রয়ীর বিনয় বসুর মা। জন্মলগ্নেই অনন্য এক রত্নগর্ভার স্পর্শ পেল সেই শিশু।

“মামাবাড়িতেই বেড়ে উঠতে লাগলাম,” বলছিলেন দীপঙ্কর দে। “অনেক পরে আমি যখন ক্লাস নাইন কী টেনে পড়ি, তখন একবার বাবাকে দেখার আবদার করেছিলাম। আলাদা কোনও সেন্টিমেন্ট নয়, এমনিই। তখন কলকাতাতেই থাকি। আমার মেজমামা আমাকে ধর্মতলার মেট্রো সিনেমার পাশে কাফে ডি মনিকোয় নিয়ে গেলেন। সেখানেই প্রথম দেখলাম বাবাকে। না, তখনও কোনও আলগা আবেগে থরথর করে কাঁপেনি আমার বুক। মা, মামাবাড়ি, মামা, মাসিরাই ছিলেন আমার সবকিছু। বাবার সঙ্গে দেখা হল। একটা বই উপহার দিলেন আমাকে, Roget’s Thesaurus। মাকে নিয়ে সামান্য একটা দুটো কথা হল। মামুলি। উঠে পড়লাম।”

Dipankar De

দোলন রায়ের সঙ্গে, বিন্ধ্যাচলে

পরে আর কখনও বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছিল কি?

“আর একবার দেখা হয়েছিল,” বললেন দীপঙ্কর ওরফে টিটোদা। “তখন আমরা মনোহরপুকুর রোডে থাকতাম। ওই শেষ। আমার জীবন থেকে মুছে গেল একটি নাম, বিনয়েন্দ্রকুমার দাম। আমার মামাবাড়ি ছিল মধ্যবিত্ত, একান্নবর্তী পরিবার। একটা ছোট্ট উঠোন, চারিদিকে ঘর। আমার অন্নপ্রাশন দিয়েছিলেন এক যুগাবতার রমণী, আনন্দময়ী মা। আমার মায়ের কাছে শুনেছি, আনন্দময়ী মা আমার মুখে আপেল দিয়ে নাকি বলেছিলেন, ‘এই ছেলে সংসারে বেশিদিন থাকবে না।’ কোথায়! আর কবে সংসার ছেড়ে যাব! কোথায় যাব! জানি না! আর কবে হবে!”

তাঁর কোথাও যাওয়া হয়নি। তাঁর তেমন কিছু পাওয়াও হয়নি। গ্ল্যামারের আলোকবৃত্তে থাকা সত্ত্বেও চাওয়ার পরিমাণও ছিল নেহাতই কম। একটু ঘুরতে চেয়েছিলেন। জ্ঞানমার্গে বিচরণ করতে চেয়েছিলেন। ভালোমন্দ খেতে চেয়েছিলেন। বই পড়তে চেয়েছিলেন। তিনি তা পেয়েছেন।

Uttam Kumar

কিন্তু উত্তমযুগের একজন শিল্পী হিসেবে যে সম্মান, ভালোবাসা, পুরস্কার তাঁর পাওয়ার কথা ছিল, পাননি। পরিচালক তপন সিংহ পর্যন্ত লিখেছিলেন, দীপঙ্কর তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা পেল না। আরও ভালোভাবে ওঁর অভিনয় প্রতিভাকে কাজে লাগানো যেত।

হয়নি। হয় না অনেককিছু। তা নিয়ে আক্ষেপ নেই টিটোদার। দুঃখ নেই। পুরস্কার তাঁকে ঋদ্ধ করতে পারেনি। তিরস্কার দেয়নি দহন জ্বালা। কোনও বছর জন্মদিন পালন করেননি দীপঙ্কর দে। পার্টি, মটন, জিন, শেরি, শ্যাম্পেন ফোয়ারা তোলেনি তাঁর জন্মবারে। দোলন রায়ের সঙ্গে জীবনজুটি বাঁধার পর থেকে প্রতি বছর এই দিনটাতে তাঁরা দু’জনে চলে যান কোনও না কোনও অনাথ আশ্রমে। সেখানকার শিশুদের পেট ভরে খাওয়ান। নিজেরাও পাত পেড়ে বসে পড়েন। চেটেপুটে খান।

এক জীবনে ৯৭২ বার পূর্ণিমা দেখার সৌভাগ্য হল আপনার।

ভালো থাকবেন টিটোদা।


Edited by Kamalendu Sarkar
Published by Prabuddha Neogi

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন

WBFJA

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *