একটু হলেও ব্যতিক্রমী
ছবি: বহ্নিশিখা
পরিচালনা: পীযূষ বসু
অভিনয়ে: উত্তমকুমার, সুপ্রিয়া দেবী, রঞ্জিৎ মল্লিক, অলিভিয়া, শিবানী বসু, তরুণকুমার
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ১৩ মিনিট
সত্তর দশকের মধ্যভাগে অ্যাকশধর্মী হিন্দি ছবির দাপটে আরও বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল বাংলা চলচ্চিত্র। তবুও ভরসার এক অন্য নাম ছিলেন উত্তমকুমার। সেই সময় মুক্তিপ্রাপত ‘বহ্নিশিখা’ ছবির রিভিউ করেছিলেন নির্মল ধর। WBFJA-এর পাতায় রইল সেই সমালোচনার পুনর্মুদ্রণ
বাংলা ছবিতে ভায়োলেন্স এবং সেক্স নিয়ে বেশকিছু অ্যাকশন ছবি তোলা হয়েছে বটে, তবে এ পর্যন্ত কোনওটাই তেমন জমেনি। কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, গুণগত বিচারে ছবিগুলির মান অত্যন্ত নিম্নপ্রকৃতির। সেক্ষেত্রে পীযূষ পরিচালিত ‘বহ্নিশিখা’ (Bahnishikha) একটু হলেও ব্যতিক্রমী। সেট, ক্যামেরা, সাজসজ্জা এবং সর্বোপরি পরিচালনার দিক থেকে এই ধরনের ছবিগুলির মধ্যে এটি একটি বিশিষ্ট আসন গড়ে নেবে আশা করা যায়।
বিলাস (উত্তমকুমার) পরিচয়-গোত্রহীন। তার সঙ্গে বিবাহের ব্যাপারে লতিকার (সুপ্রিয়া) অভিভাবকেরা ঘোরতর আপত্তি জানায়। লতিকা তবু বিলাসকে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু পাঁচবছর পর বিলেত থেকে ফিরে এসে বিলাস দেখে যে লতিকা অপরের বিবাহিতা স্ত্রী এবং এক কন্যার জননী।
আরও পড়ুন: বিশেষ চরিত্রে পঙ্কজ ত্রিপাঠী
ব্যাস! এরপর বিলাস হয়ে ওঠে এক কুখ্যাত সমাজবিরোধী দলের নেতা মিঃ সিনহা। একই লোক আবার অপরদিকে একজন খ্যাতনামা ব্যারিস্টার, জনসেবক এবং ত্যাগী মানুষ।
একই লোকের দুই বিপরীত রূপ অবাস্তব মনে হলেও ছবিতে তা মোটামুটি মানিয়ে গিয়েছে। তাছাড়া এ ধরনের ছবিতে যুক্তি না খোঁজাই শ্রেয়।
সম্পাদনার গুণে ছবির প্রথমার্ধে বেশ গতি আছে। তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধ কিছুটা শ্লথ। এই অংশকে একটু কাটছাঁট করলে এবং শেষের মেলোড্রামাগুলোকে এড়িয়ে গেলে ছবির বাঁধন আরও আঁটসাঁট হত। শুধুমাত্র বহ্নির পরিচয় প্রকাশ করার জন্য শেষ দৃশ্যটার তেমন কোনও প্রয়োজন ছিল না।
ছবিতে ডিটেলের কাজ ভালো, তবে আরও নজর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। টেকনিক্যাল কাজ বেশ উন্নত মানের।
আরও পড়ুন: ‘মহাভারত’ নির্মাণের পর বিদায় নিতে চান আমির
তবে ‘বহ্নিশিখা’র যা কিছু সাফল্য, তার মূলে হলো ছবির প্রাণবিন্দু উত্তমকুমার (Uttam Kumar) ও তাঁর অনবদ্য অভিনয়। তাঁর বিলাস এবং সিনহা, দুটিই চরিত্রানুগ। বিভিন্ন সাজে তাঁকে মানিয়েছেও সুন্দর। উত্তমকুমারের পাশে রঞ্জিৎ যদিও কিছুটা নিষ্প্রভ, তবু তিনি ভালোই অভিনয় করেছেন। লতিকা চরিত্রে সুপ্রিয়া তাঁর সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। এছাড়া তরুণকুমার, শিবানী বসু এবং অলিভিয়ার অভিনয়ও বেশ ভালো। স্মাগলার দলের সকলেই বেশ ম্মার্ট।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরারোপিত গানগুলির মধ্যে রাণু মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের গানটি শুনতে সবথেকে ভালো লাগে।
প্রথম প্রকাশ: অমৃত, পৌষ ১৩৮৩
Edited by Kamalendu Sarkar
Published by Prabuddha Neogi
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন