About Us - WEST BENGAL FILM JOURNALISTS' ASSOCIATION" /> About Us - WEST BENGAL FILM JOURNALISTS' ASSOCIATION" />

About Us

শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে সারা ভারতবর্ষে প্রথম চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থার জন্ম হয়েছিল এই বাংলায়। তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের বরিশালে ১৯৩৭ সালে বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের পত্তন হয়। এর ঠিক একবছর পরে, ১৯৩৮ সাল থেকে বাৎসরিক বিএফজেএ পুরস্কারের প্রবর্তন। প্রথমদিকে শুধু বাংলা নয়, পুরস্কৃত করা হতো হিন্দি এবং বিদেশি ছবিকেও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর বিএফজেএ’র ক্রিয়াকর্ম সরে আসে কলকাতায়। দেবকী কুমার বসু থেকে প্রমথেশ বড়ুয়া, কাননদেবী, নীতিন বসু থেকে রাইচাঁদ বড়াল, কে না পুরস্কৃত হয়েছেন বিএফজেএ’র লাল রিবনে। কাননদেবী তো  বলেইছিলেন “আমার কাছে বিএফজেএ পুরস্কার অস্কার প্রাপ্তির সমান!”

সর্বভারতীয় স্তরে কলকাতা চলচ্চিত্র সাংবাদিকদের এই পুরস্কার পঞ্চাশ-ষাট-সত্তরের দশকে জাতীয় পুরস্কারের থেকেও বেশি জনপ্রিয় ছিল। এই সম্মান নিতে মুম্বই থেকে আসতেন চলচ্চিত্র জগতের তারকারা! রাজ কপূর, দিলীপকুমার, প্রাণ থেকে শুরু করে নার্গিস, গুরু দত্ত, গুলজ়ার, শশী কপূর, শম্মী কপূর, রবিশঙ্কর, সায়রা বানু, বাসু ভট্টাচার্য, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, বাসু চট্টোপাধ্যায়, জয়া ভাদুড়ি, রেহানা সুলতানা, শর্মিলা ঠাকুর, শবানা আজ়মি, শ্যাম বেনেগল, এমএস সত্তু, রাজেশ খন্না এমনকী অমিতাভ বচ্চনও বিএফজেএ’র ডাকে কলকাতায় উড়ে এসেছেন সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে! তুলট কাগজের একটা লাল রিবনে বাঁধা সার্টিফিকেট তাঁরা হাতে তুলে নিয়ে গর্বের সঙ্গে বলতেন, জীবনের সেরা সম্মান নিয়ে গেলাম এই কলকাতা থেকে। আর বাংলার সিনেমা মহলে বিএফজেএ পুরস্কারের মূল্য ছিল জাতীয় পুরস্কারের চাইতেও ওপরে। বাংলা সিনেমার কোনও শিল্পী, অভিনেতা, অভিনেত্রী বা কলাকুশলী কেউই বাদ পড়েননি পুরস্কারের তালিকা থেকে।

সেই পুরোনো দিনের কাননদেবী থেকে সুচিত্রা সেন, উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, সন্ধ্যা রায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়, সমিত ভঞ্জ, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, সম্ভবত কোনও নামই বাদ যাবে না। বিএফজেএ পুরস্কার ছিল সাংবাদিক সমালোচকদের একমাত্র সিনেমা জগৎ স্বীকৃত সম্মান। দুর্ভাগ্যের বিষয়, কালের নিয়মে প্রায় সত্তর বছর নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে চলতে-চলতে একটা সময় সংবাদিকদের এই সংস্থা থেকে মতান্তর ও মনান্তরের কারণে, ২০০৭ সালে কয়েকজন সদস্য পদত্যাগ করেন। এরপর দীর্ঘ আট-নয় বছর বিএএফজেএ কোনও পুরস্কার অনুষ্ঠান করে উঠতে পারেনি। কারণ অজানা!

বাংলা ফিল্ম জগতের বহু পরিচিতজন এবং বিএফজেএ অনুরাগীরা বারবার পদত্যাগী সদস্যদের পুরস্কার অনুষ্ঠান ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করতে থাকেন। তখন ঋতুপর্ণ ঘোষ সহ একঝাঁক নতুন প্রজন্মের পরিচালক নব উদ্যমে বাংলা সিনেমায় প্রাণসঞ্চার করেছিলেন। প্রায় একবছর ধরে ফিল্ম জগতের নানাজনের সঙ্গে আলোচনা করে ২০১৭ সালে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের জন্ম হয় মূলত আমাদের পুরোনো বন্ধু ও সুহৃদ গৌতম জৈনের উদ্যোগে। সংগঠন রেজিস্টার্ড হয় তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। প্রাথমিক সঙ্গী হিসেবে সহযোগী ছিলেন তিনজন ফিল্ম সাংবাদিক সোমা এ চট্টোপাধ্যায়, নির্মল ধর ও সজল দত্ত। বালিগঞ্জ প্লেসে হলো আমাদের রেজিস্টার্ড ঠিকানা। সংস্থার শুভ মহরতে উপস্থিত ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অশোক ধনুকা, অঞ্জন বসু, তপন বিশ্বাসেরা।  তপনবাবু আমাদের নিয়মিত সভা আয়োজনের জন্য তাঁর অফিস গড়িয়াহাট রোডের অফিসে একটি ঘর বরাদ্দ করে দেন বিনামূল্যে। আমরা কিছুদিন আগে পর্যন্তও সেই অফিস থেকেই সভার কাজকর্ম চালিয়েছি।

এই মুহূর্তে আমাদের সভ্যসংখ্যা ৩০। তাঁদের মধ্যে থেকেই একটি কর্মসমিতির তৈরি করে সংস্থার কাজ চালানো হচ্ছে। ২০১৭ সালে সংস্থা পঞ্জিকৃত হওয়ার একবছর পর স্থির হয় WBFJA বাৎসরিক পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে এবং সেটি আয়োজনের দায়িত্বে থাকবে গৌতম জৈনের সংস্থা রিয়াল রিল। নতুনভাবে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয় ‘সিনেমার সমাবর্তন’। নাচগান বা বিনোদনমূলক কোনও অনুষ্ঠানের পরিবর্তে ‘সমাবর্তন’ শব্দটির যথার্থ সংজ্ঞা মনে রেখে WBFJA একটি রুচিসম্পন্ন সুন্দর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান করে এসেছে এযাবৎকাল।

১৯৩৮ সাল থেকে প্রথমে বিএফজেএ পুরস্কার এবং পরে ‘সিনেমার সমাবর্তন’ অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় রবিবার কলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত হয়ে এসেছে। এই কাজেও প্রিয়া সিনেমা কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা আমরা শুরু থেকেই পেয়ে এসেছি। এছাড়া নানা সময় সহযোগিতা করেছেন বসুশ্রী ও জেম সিনেমা কর্তৃপক্ষ।

আপনাদের সকলে সহযোগিতার আরও বলিষ্ঠ হোক আমাদের আগামীদিনের কর্মকাণ্ড।

নির্মল ধর
সাধারণ সম্পাদক