Features

ছ’মাসের শিশুর মুখটা উত্তমকুমারের

বাল্মীকি চট্টোপাধ্যায়: হঠাৎ করেই এমপি প্রোডাকশন্স লিমিটেডের সঙ্গে তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেন উত্তমকুমার (Uttam Kumar)। প্রথম বছর মাইনে পাবেন মাসে ₹৪০০। দ্বিতীয় বছর ₹৬০০ এবং তৃতীয় বছর তা বেড়ে হবে ₹৭০০। উত্তমকুমারের জন্য বিশাল ব্যাপার। এমপি প্রোডাকশন্স তখন ‘সহযাত্রী’ ছবি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নায়ক অসিতবরণ, নায়িকা ভারতী দেবী (Bharati Devi)

কোট আনকোট ‘ছবি তোলার’ দিন এগিয়ে এল। সেই সময় টালিগঞ্জে শুটিংকে চলতি কথায় বলা হতো, ‘ছবি তোলা’। কিন্তু হঠাৎ একটা সমস্যা হল। আগের ছবির শুটিং শেষ না হওয়ার জন্য নায়ক অসিতবরণ সময় দিতে পারলেন না। শিকে ছিঁড়ল উত্তমকুমারের। এমপি প্রোডাকশন্সের মালিক মুরলিধর চট্টোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিলেন এই ছবির নায়ক হবেন উত্তমকুমার। নায়িকা অপরিবর্তিত। মানে, ভারতী দেবী।

আরও পড়ুন: ছবিতে গল্প থাকতেই হবে

নিউ থিয়েটার্সের মালিক বিএন সরকারের হাত ধরে ভারতী দেবী ছবির জগতে পা দেন। প্রথম ছবি ‘ডাক্তার’। ছবিতে ছিলেন অহীন্দ্র চৌধুরী, পঙ্কজ মল্লিক, অমর মল্লিক ও আরও অনেকে। ছবিটি মুক্তি পায় ৩১ অগস্ট ১৯৪০। চিত্রা আর পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে। উত্তমকুমারের বয়স তখন ১৪ বছর। স্কুলে পড়েন।

যাইহোক, এমপি প্রোডাকশন্সের ‘সহযাত্রী’ ছবির রিহার্সাল শুরু হয়ে গেল। তারপর শুটিং। এক সময় শুটিংও শেষ হল। উত্তরা, পুরবী, উজ্জ্বলা ও অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহে ছবি মুক্তিও পেল। ১৯৫১ সাল। কিন্তু উত্তমকুমারের সৌভাগ্যের শিকে ছিঁড়ল না। এই ছবিও চলল না।

আরও পড়ুন: ‘এতগুলো মালয়ালম ছবি করার পর ভাষাটা রপ্ত হয়ে গিয়েছে’

এবার একেবারে ভেঙে পড়লেন উত্তমকুমার। ভাবলেন, কাজ নেই আর অভিনয় করে। ফিরে যাবেন পোর্ট কমিশনার্সের অফিসেই। একদিন অগ্রদূতের বিভূতি লাহাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী করা যায় বলুন তো বিভূতিদা? চাকরিতে ফিরে যাব?’

বিভূতি একটু বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘চাকরিটা এখনও রেখেছ?’

উত্তম আমতা-আমতা করে বললেন, ‘আজ্ঞে, কী হবে তা তো ঠিক বুঝতে পারছি না, তাই বন্ধুবান্ধবের সাহায্যে কোনওরকমে টিকিয়ে রেখেছি।’

বিভূতি বললেন, ‘মনে হচ্ছে চেহারার জোরে তুমি টিকে যেতে পারো।’

Uttam Kumar

এই কথা শুনে উত্তমকুমারের মন আরও খারাপ হয়ে গেল। কারণ, নিজের চেহারার ওপর যেটুকু আস্থা ছিল, সেটুকুও তখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। তখনকার দিনের এক বিখ্যাত সাপ্তাহিক পত্রিকায় একটা কার্টুন ছবি দেখে। ছবিটার নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘বাংলার নায়ক’। সেই কার্টুন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি মেয়ের কোলে ছ’মাসের এক শিশু শুয়ে আছে। শিশুটি ওই মেয়েটির গলা লক্ষ্য করে ওপরের দিকে দু’হাত তুলে আছে। নিচে ক্যাপশন লেখা, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’। ছ’মাসের শিশুর মুখটা উত্তমকুমারের।

সেই সময় খারাপ লাগলেও পরে নাক-কান মুলেছিলেন উত্তমকুমার। বড়দিদির মতো অভিনেত্রীর বিপরীতে পারতপক্ষে আর নায়ক সাজবেন না। যদিও পরে ভারতী দেবীর সঙ্গে ‘মনের ময়ূর’ করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’-এও ছিলেন দু’জনে।


Edited and Published by Prabuddha Neogi

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন

WBFJA

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *