হিরোইন অভাবগ্রস্ত টালিগঞ্জে ফিরছেন মঞ্জুলা বন্দ্যোপাধ্যায়
নির্মল ধর: যাত্রিকের ‘কাঁচের স্বর্গ’ (Kancher Swarga) ছবিতে শেষবারের মতো তাঁকে দেখা গিয়েছিল। পরনে ছিল দিদিমনির পোশাক। তারপরেই বাংলা ছবি থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। তখন তিনি প্রজাপতির নির্বন্ধে ধরা পড়েছিলেন অসীমকুমারের সঙ্গে। স্বামীরও নির্দেশ ছিল, অভিনয় নয়। মঞ্জুলা সরকার তখন ভাবতেন সিনেমা এবং সংসার একসঙ্গে চলতে পারে না। অবশ্য তাঁর সেই চিন্তার পরিবর্তন এখনও তেমন হয়নি।
জিজ্ঞাসা করলাম, “কেন?”
“সত্যি কথা বলব?”
“বলুন, না বলবেন কেন?”
হাসতে-হাসতে বসে থাকা চেয়ারে হেলান দিয়ে হাতের পেনসিলটাকে চিবুকে ঠেকালেন মঞ্জুলা। বোধহয় উত্তরটা গুছিয়ে নিলেন। তারপর বললেন, “ফিল্ম লাইনের নানা ঝামেলার কথা আপনাকে আর খুলে কী বলব! শুটিং, প্রোডিউসার এইসব সামলে সংসারের প্রতি পুরোপুরি দায়িত্ব পালন করা কি সম্ভব? হয় না। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই যদি শুটিংয়ে থাকেন, কে কখন ফিরবেন ঠিক নেই। এ অবস্থায় ছোটখাট মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ই। সুতরাং…”
আরও পড়ুন: লোডশেডিং রেশনিং করার দাবি সত্যজিৎ, উত্তম, সৌমিত্রদের (পর্ব ১)
এতবছর বাদে আবার ফিল্মে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে মঞ্জুলা বললেন, “প্রথমত, স্বামীর সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ ঘটেছে। দ্বিতীয়ত, অফিস আর ব্যবসা নিয়ে বোর হচ্ছি। একটু রিলিফ দরকার। উপরন্তু বোধহয় একটু জেদও কাজ করছে ভেতর-ভেতর।”
স্বামী অভিনয় করতে দেননি, তাই বলে শিল্পী হিসাবে যে তিনি ফুরিয়ে যাননি, সেটা বোধহয় প্রমাণ করতে চান মঞ্জুলা।
সলিল সেনের ‘নাগিণী কন্যার কাহিনী’তে নাকে নোলক, কপালে টিকলি, গলায় ভারি পুঁথির মালায় যাকে সাপুড়ে কন্যা বলে সবাই চিনেছিল, আজ তার চেহারায় বদল হয়েছে অনেক। টগবগে তরুণীর দেহে এখন ঢল নামছে। মুখশ্রী হয়েছে আরও ফটোজেনিক। কয়েকটি বিশেষ অ্যাঙ্গেলে একবারে নিখুঁত প্রতিমা।
আরও পড়ুন: মৃণাল সেনের ছবি থেকে বাদ পড়লেন অমিতাভ বচ্চন
মঞ্জুলা সরকার এখন বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছেন। ইন্দো-আমেরিকান সোসাইটির অফিসে তাঁর পরিচয় ইনচার্জ মিস ব্যানার্জি হিসাবে। সারাটা দিন কয়েক শো ছাত্র-শিক্ষকের ঝক্কি সামলে নিজের স্টিলের ব্যবসাটাও চালিয়ে যাচ্ছেন নিপুণ হাতে।
বললাম, “আবার ফিল্ম করতে শুরু করছেন, এতসব সামলাবেন কী করে?”
মার্জিত হাসিতে বিনয়ের সুর ঝরিয়ে মঞ্জুলা বললেন, “দ্যাট আই উইল ম্যানেজ। লোকজন আছে।”
আরও পড়ুন: ”বাঞ্ছারামের বাগান’ না করা মস্তবড় ভুল ছিল’
হিরোইন অভাবগ্রস্ত টালিগঞ্জে মঞ্জুলা আবার ফিরছেন, এটা এক কথায় আনন্দ সংবাদ। ‘জলজঙ্গল’, ‘অগ্নিসম্ভবা’, ‘রাজধানী থেকে’র নায়িকাকে ফিরে পেয়ে টালিগঞ্জ অপব্যবহার করবে না নিশ্চয়ই। মঞ্জুলাও স্থির করেছেন ভালো এবং ইন্টারেস্টিং চরিত্র পেলে তবেই করবেন। যেমন এখন করছেন নিরঞ্জন দে’র ‘নিশিবাসর’। ওঁর বিপরীতে রয়েছেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
যোগাযোগ হল কীভাবে?
বললেন, “পরিচালক সুশীল মজুমদারের স্ত্রীর মারফৎ যোগাযোগ ঘটেছিল নিরঞ্জনবাবুর সঙ্গে। এখন আরও দু’-একজনের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। ফাইনাল হলে নিশ্চয়ই জানাব।”
আরও পড়ুন: আমার জেঠু উত্তমকুমার
আমাদের কথাবর্তার ফাঁকে ফুরফুরে ইংরেজি-বলা কয়েকজন স্টুডেন্ট এল। প্রত্যেককেই রিসিভ করলেন মঞ্জুলা উইথ প্রপার করডিয়্যালিটি। ক্লান্তি নেই, বিরক্তিও নেই।
বেঙ্গল এনামেলে সাত-সাতটি বছর মার্কেটিং ম্যানেজার হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগছে তাঁর। ওখানে বিজ়নেস ম্যানেজমেন্টের ক্লাসও নিচ্ছেন নিয়মিত। স্টিলের ব্যবসা তেমন ভালো চলছে না এখন। ভাবছেন অন্য ব্যবসায় সুইচওভার করবেন।
আরও পড়ুন: ‘অতটা অ্যাপিল করেনি উত্তমকুমারের অভিনয়’
আনন্দের বিষয়, এত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের শিল্পীমনকে মঞ্জুলা মরতে দেননি। তাই তিনি আবার ফিরে আসছেন রূপালি পর্দায়। রূপালি পর্দার সোনালি আকর্ষণে নয়, তিনি আসছেন অভিনয়ের আকর্ষণে।
‘নিশিবাসর’ দিয়ে তাঁর নিশি অবসান হোক, এটাই কাম্য।
প্রথম প্রকাশ: অমৃত অগ্রহায়ণ ১৩৮৩
Edited and Published by Prabuddha Neogi
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন





