দ্বিতীয় সেরা সত্যজিৎ, হতভম্ব দর্শক
চিত্রদূত: নানা কারণে এবার বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব (Berlin Film Festival) সুনাম অর্জন করতে পারেনি। যে ছবিটিকে জুরিরা উৎসবের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার গোল্ডেন বিয়ার (Golden Bear) দিয়েছেন, অনেকের মতে সেটি কোনও অংশেই তার উপযুক্ত নয়। শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে যখন তুরস্কের ‘ড্রাই সামার’-এর নাম ঘোষণা করা হয়, উৎসবের সভ্যবৃন্দ, সমবেত সাংবাদিকরা সকলেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। উৎসব সমিতির সভ্যদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে একটি অতি সাধারণ মানের ছবিকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দেওয়ার ফলে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের সম্মান যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে অনেক দেশই এই উৎসবে ছবি পাঠানোয় উৎসাহবোধ নাও করতে পারে।
যে উৎসবে সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’-এর মতো ছবি আছে সেখানে ‘ড্রাই সামার’-এর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ উৎসবের কেউই সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিতে পারেননি।
এই প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউনের বার্লিনস্থ প্রতিনিধি সিনথিয়া গ্রিজ়ার লিখেছেন: ‘To give the silver-capped bear (2nd prize) to a master work like the Indian ‘Mahanagar’, instead of the 1st prize, really makes one begin to question the value of prizes and film festivals. Critics and festival guests, as the news spread rapidly through the halls and lobbies here, were dumbfounded.’
আরও পড়ুন: ‘এক ফিল্ম হিরোর কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি’
মহানগরের প্রথম পুরস্কার না পাওয়ার কৌতুকজনক ঘটনাটি অবশ্য ভারতেও ঘটেছে। তবে তফাৎ হচ্ছে, বিদেশে ‘মহানগর’ যোগ্য সম্মান না পাওয়ার ফলে অনেক জল ঘোলা হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু এখানে এক পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর কোনও রাজ্য বা প্রদেশে বিশেষ কিছুই বলা হয়নি এই অবিচারের বিরুদ্ধে! তবে বিদেশে ‘মহানগর’ স্বীকৃতি পাওয়ার পরে আশা করা যায় ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার সমিতি, সত্যজিতরে ছবি বিচারকালে আরেকটু বাস্তববুদ্ধির পরিচয় দেবেন।
এমনিতে নষ্ট পৃথিবীর করাল ছায়ায় এবারের বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। উৎসবে প্রদর্শিত বেশিরভাগ ছবিরই মূল বিষয়বস্তু ছিল হিংসা, ধ্বংস, মৃত্যু। ছবির মানুষেরাও যেন অন্ধকার সাম্রাজ্যের নাগরিক। ওদের মধ্যে কেউ বা খুনি, কেউ তস্কর, কেউ বা যৌনবিকারগ্রস্ত হয়ে সমাজে বিষ ছড়াচ্ছে। ‘দি পন ব্রোকার’ চিত্রে অভিনয়ের জন্যে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা রড স্টাইগার উৎসবে প্রদর্শিত ছবিগুলির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন, “এই অসুস্থ পৃথিবীকে সারানোর জন্যই এর রোগগুলোকে সর্বসমক্ষে আমাদের প্রকাশ করতে হবে।”
আরও পড়ুন: আর্ট ফিল্ম মানে শুধুই যৌনতার ছড়াছড়ি, ক্ষুব্ধ ঋত্বিক
এবারের উৎসবে ফ্রান্স বা ইতালি থেকে কোনও যথার্থ প্রথম শ্রেণীর ছবি আসেনি। সুইডেন এবং কমিউনস্ট দেশগুলি থেকেও কোনও ছবি এই উৎসবে আসেনি। বার্লিন উৎসবে সুইডেনের ‘৪৯১’ পাঠানোর প্রস্তাব হয়েছিল। কিন্তু অশ্লীলতার অজুহাতে উৎসব কমিটি ছবিটিকে প্রদর্শনের অনুমতি দেননি। তার প্রতিবাদে সুইডেন উৎসবকে বয়কট করে একটিও ছবি পাঠায়নি।
সোভিয়েত রাশিয়া এবং তার প্রভাবিত অন্যান্য দেশগুলি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব বয়কট করেছিল রাজনৈতিক কারণে।
প্রথম প্রকাশ: অমৃত, শ্রাবণ ১৩৭১
Edited and Published by Prabuddha Neogi
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন


