Flashback

‘সংসার সীমান্তে’ নিয়ে হতাশ রাজেন তরফদার

স্টুডিয়ো সংবাদদাতা: দু’দিন ধরে সবক’টা স্টুডিয়ো ঘোরার পর যা বোঝা গেল, তাতে মনে হলো টালিগঞ্জ যেন বলতে চায় ‘রিং আউট দি ওল্ড, ব্রিং ইন দি নিউ’। নতুনের জয়গান আর নবীনের কলহাস্যে তাই আজ টালিগঞ্জ মুখর। তাই ভুলেও কখনও দেখতে পাওয়া যায় না সুশীল মজুমদারকে। রাজেন তরফদার (Rajen Tarafdar) বা চিত্ত বসুকেও দেখা যায় না। শুনেছি সুশীলবাবু বম্বে (মুম্বই) পাড়ি দিয়েছেন। চিত্তবাবুর খবর জানা নেই।

তবে সবচাইতে দুঃখ হয় রাজেনবাবুকেও চোখে পড়ে না বলে। একাধিকবার কানে এসেছে প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘সংসার সীমান্তে’ (Sansar Seemantey) কাহিনিকে তিনি চিত্ররূপ দেবেন। অদ্যবধি তার কোনও পাকাপাকি সংবাদ না পেয়ে একদিন সশরীরেই হাজির হলাম রাজেনবাবুর বাড়িতে। ‘অন্তরীক্ষ, ‘গঙ্গা’র স্রষ্টা তিনবছর যাবৎ কেন নীরব সেটা ভাববার মতো বিষয় বটে!

আরও পড়ুন: ‘ঘরে বাইরে’ নিয়ে আর ভাবছেন না সত্যজিৎ

আসল ব্যাপার হলো আর পাঁচজন পরিচালকের মতো রাজেনবাবু স্রেফ জীবিকানির্বাহের জন্য শিল্পের এই কলাক্ষেত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করেননি। ছবি করা না করা তাঁর কাছে পুরোপুরি মানসিক প্রস্তুতির ব্যাপার। তাই ছবি করার একঘেয়েমি থেকে রিলিফ পাওয়ার জন্যই স্বেচ্ছাকৃত এই বিরতির আয়োজন।

রাজেনবাবুর সর্বশেষ ছবি ‘আকাশ ছোঁয়া’ মুক্তি পেয়েছে বছর তিনেক জাগে। তারপরেই শুনেছি ‘সংসার সীমান্তে’র খবর। এখনও শুনছি! রাজেনবাবু বললেন, “এ গল্প চিত্রায়ণের কথা ভেবেছি অনেক আগেই। চিত্রনাট্য লেখাও শেষ করেছি বহুদিন আগে। একটা চোর ও একটা বেশ্যার প্রণয়ঘটিত কাহিনি নিয়ে গল্প।”

আরও পড়ুন: ‘কন্যাদায়গ্রস্ত এক বয়স্ক ভদ্রলোক সাহায্য চাইতে এলেন’

অনেকদিন ধরেই প্রোডিউসার খুঁজছেন রাজেনবাবু। গল্পও শুনিয়েছেন তাঁদের। কিন্তু কেউই রাজি হননি। কারণ, সমাজের নীচুতলার ওরকম দুটো চরিত্র নিয়ে রসালো জমজমাট কোনও ছবি করতে না পারলে আর্থিক নিশ্চয়তার সম্ভাবনা নাকি নেই! কাজেই ‘সংসার সীমান্তে’ তৈরির খবর খবরই রয়ে গিয়েছে, ফ্লোরে এখনও গিয়ে উঠতে পারেনি। রাজেনবাবুও অনন্যোপায় হয়ে ফিল্ম ফিনান্স কর্পোরেশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কাগজে-কলমে তাঁরা মঞ্জুর করেছেন ₹২ লক্ষ। হাতে এখনও পাননি। পেলেই কাজ শুরু করবেন।

এখন চলছে শিল্পী নির্বাচন পর্ব। প্রথম দিকে স্থির হয়েছিল বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা রায় প্রধান চরিত্র দু’টিতে অভিনয় করবেন। রাজেনবাবুর থেকেই জানলাম ওঁরা ছবিতে কাজ করছেন না। সম্পূর্ণ নতুন মুখ নিয়ে তিনি কাজ করবেন।

আরও পড়ুন: ‘পচা দুর্গন্ধ ছড়ালে, প্রতিবেশীরাই এসে দাহ করবে’

নতুনদের নিয়ে কাজ করায় আর্থিক সাফল্যের অনিশ্চয়তার কথা জানালে তিনি বললেন, “পুরনোদের নিয়ে ছবি করলেই যে তা বক্স অফিসে সফল হবে, এমন ধারণা ঠিক নয়। তার অনেক প্রমাণ হাতের কাছে রয়েছে। তাছাড়া নতুনদের নিয়ে কাজ করার সুবিধা অনেক। পুরনোদের প্রতিটা অঙ্গভঙ্গী, ডায়ালগ ডেলিভারির কায়দাকানুনের সঙ্গে দর্শক অতিপরিচিত। আমার চোখ তো বটেই। আসল ব্যপার হলো, খ্যাতনামা শিল্পীরা অনেকেই ইমেজ ভেঙে চরিত্র সৃষ্টি করতে পারে না। এর জন্য অবশ্য দর্শকই দায়ী। তাঁরা অভিনীত চরিত্রের থেকে শিল্পীকে অন্তরে স্থান দেন বেশি।”

রাজেনবাবু এরপর যোগ করলেন, “আমার মতো যাঁরা ছবি করাকে শিল্পমাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছেন, তাঁরা স্বভাবতই এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পারেন না। তাই নতুনদের নিয়ে কাজ করতেই হয়। যদি বা কখনও-সখনও পুরনোদের নিয়ে কাজ করতে হয়, সেই শিল্পীর ইমেজটা বদলে দিতে চেষ্টা করি আমরা।”

আরও পড়ুন: শেষ নাহি যে

এ কথা শোনোর সঙ্গে-সঙ্গে মনে পড়ল ‘গঙ্গা’র সন্ধ্যা রায় আর ‘আকাশ ছোঁয়া’য় সুপ্রিয়া চৌধুরী অভিনীত চরিত্র দুটোর কথা। সুপ্রিয়া ততদিনে রীতিমত স্টার। সন্ধ্যাকে নবাগতা বলা চলে। অথচ দুটো চরিত্রই নিজ-নিজ বৈশিষ্ট্যে এখনও ভাস্বর। কারণ আর কিছু নয়, পরিচালকের সৃজনক্ষমতার বৈচিত্র্য।

আরও পড়ুন: না হতে পারা হিন্দি উত্তম রত্ন

রাজেনবাবু তাঁর আগামী ছবি ‘সংসার সীমান্তে’ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্যের পরিচয় হাজির করতে পারবেন বলে আশা করেন। ‘গঙ্গা’র পর তাঁর অন্য কোনও ছবি সেরকম অর্থিক বা শৈল্পিক সাফল্য কেন পেল না জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, “এ ব্যাপারে কংক্রিট কিছু বলা সম্ভব নয়। চেষ্টা তো করেছি সাধ্যমত। তবে কী না ‘গঙ্গা’ আমার ‘গঙ্গা’ই। ওর সঙ্গে কারও তুলনা করতে করতে পারি না। ‘গঙ্গা’র মতো দ্বিতীয়টা সৃষ্টি করতে পারিনি সেটা আমারই অক্ষমতা। অতর্কিতে এমন ছবি একটা-দুটোই হয়। সত্যজিং রায়ের ‘পথের পাঁচালী একটাই হয়েছে। আর হবে কি?”

এই রাজেন তরফদারকে এখনও পর্যন্ত টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়ার দেখতে পাচ্ছি না। তিনি নবীন নন নিশ্চয়ই আবার প্রবীণের দলেও তাঁকে ফেলা যায় না। স্টুডিয়োপাড়ার নতুন ঝোড়ো হাওয়ায় তাঁকে দেখতে পেলে খুশি হতাম। বাংলার দর্শক আরও খুশি হবে তাঁর কাছ থেকে ‘সংসার সীমান্তে’ পেলে।

প্রথম প্রকাশ: অমৃত, কার্তিক ১৩৭৭


Edited and Published by Prabuddha Neogi

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন

WBFJA

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *