শুধু শার্লকের নাম পাল্টেছে, গল্প নয়: সায়ন্তন ঘোষাল
স্বাতী চট্টোপাধ্যায়: ব্রিটিশ লেখক আর্থার কনান ডয়েলের অমর সৃষ্টি শার্লক হোমসকে নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা কাজ হয়ে থাকলেও, বাংলায় সরাসরি তেমন কিছু হয়নি। যদিও ডয়েলের গল্পের ছায়া অবলম্বনে বাংলাতেই তৈরি হয়েছে একাধিক গোয়েন্দা কাহিনি। তবে এবার প্রায় সরাসরি হোমস আসছেন বাংলার বড়পর্দায়। পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল (Sayantan Ghosal) তাঁর ‘সরলাক্ষ হোমস’ (Saralakkha Holmes) ছবিতে গোয়েন্দার নাম কিঞ্চিৎ অদলবদল করলেও গল্পে বিশেষ পরিবর্তন আনেননি বলে জানালেন। ছবির ট্রেলারে স্পষ্ট ডয়েলের ‘দ্য হাউন্ড অফ দ্য বাস্কারভিলস’ (The Hound of the Baskervilles) কাহিনি অবলম্বনে ছবিটি তৈরি করেছেন সায়ন্তন।
প্রশ্ন ছিল, যে গল্প নিয়ে আগেই ‘জিঘাংসা’র মতো ছবি বাংলায় হয়ে গিছে এবং হিন্দিতেও ‘বিস সাল বাদ’ হয়েছে, সেই একই কাহিনি নিয়ে কেন ছবি করলেন সায়ন্তন?
“আসলে এই গল্পটা নিয়ে আমার কাজ করার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন ধরেই,” বললেন সায়ন্তন। “কিছু চরিত্র বা গল্প নিয়ে ছবি করার ইচ্ছে তো সব পরিচালকেরই থাকে। সেরকম শার্লক হোমস নিয়ে কাজ করব ভাবলেই এই গল্পটার কথা মনে হয়েছে। তবে আগের ছবিগুলো অসাধারণ হলেও সেগুলো ভারতীয় প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে। সেখানেই আমার ছবিটা আলাদা। এখানে কিন্তু পুরো ঘটনাটা লন্ডনেই ঘটছে। শুধু ভাষাটা বাংলা। শার্লক নামটা বদলে বাংলায় নাম করা হয়েছে, তবে সেটারও একটা গল্প আছে যেটা ছবি দেখলে বোঝা যাবে।”
আরও পড়ুন: প্রথমবার হিন্দি ছবি করছেন সত্যজিৎ রায়, থাকছেন সঞ্জীবকুমার
এছাড়াও গল্পে তাঁর নিজস্ব কিছু চমক থাকবে বলে জানালেন সায়ন্তন।
রাজশেখর বসুর লেখায় প্রথম শার্লক নাম পরিবর্তন করে শখের বাঙালি গোয়েন্দা ‘সরলাক্ষ হোম’ হয়ে ওঠে। তবে এখানে নামটি থাকলেও পদবি হোমস-ই থাকছে। তার কারণ ছবিতেই পাওয়া যাবে বলে দাবি পরিচালকের।
কীভাবে পরিকল্পনা হলো এই ছবির? প্রযোজনা সংস্থার চাপ নাকি পরিচালকের নিজের ইচ্ছাতেই আসল প্রেক্ষাপটে গল্প ফেলা হল?
আরও পড়ুন: প্রথমবার হিন্দি ছবি করছেন সত্যজিৎ রায়, থাকছেন সঞ্জীবকুমার
সায়ন্তন জানালেন, “কারওর একার ইচ্ছেতে হয়নি। আমি আর হিমাংশু (ধানুকা) কাজের বাইরে এমনিও অনেক আড্ডা দিই। সেরকমই একদিন গল্প করতে-করতে ও বলল, চলো শার্লক হোমস বানাই। আমি দ্বিগুণ উৎসাহে রাজি হয়ে গেলাম। তারপর গল্পটা রেডি করে ওকে শোনাতে ওর পছন্দও হয়ে গেল। তবে এই গল্পে বাঙালিয়ানা মিশিয়ে দিতে কোনওদিনই ইচ্ছে করেনি আমার। হোমসকে তার নিজের জায়গায় রেখেই ভালো লাগে। তাকে বাঙালি করে দিলে মানাবে না। সেইজন্যেই আসল জায়গায় রেখে গল্পটা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল।”
এ মাসের শেষে মুক্তি পেতে চলেছে সায়ন্তনের ছবি। এর মধ্যে ‘ধূমকেতু’ ঝড়ে আক্রান্ত বাংলার বক্স-অফিস। দেব-শুভশ্রীর ছবি নিয়ে দর্শকদের এই উৎসাহের প্রভাব কতটা অন্য বাংলা ছবির ক্ষেত্রে পড়বে বলে মনে করেন সায়ন্তন?
“এটা গোটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই ভালো একটা ঘটনা,” বললেন সায়ন্তন। “যাঁদের ছবি নিয়ে এত উত্তেজনা তাঁরা তো ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র। তাঁরা সুপারস্টার বলেই এত মানুষ তাঁদের জন্য হলে আসছেন সেটা ঠিকই কিন্তু মানুষের এই উৎসাহ যদি ধরে রাখা যায় তাহলে আগামী দিনে বাংলা ছবি আরও এগিয়ে যাবে। এ বছর কিন্তু বেশ কিছু ছবি ভালো ফল করেছে।”
আরও পড়ুন: ছবিতে প্রথমবার রূপম ইসলামের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান
নতুন নিয়মে প্রতিটি হলে একটি করে বাংলা ছবি চলবে প্রাইম টাইমে। এই প্রসঙ্গে সায়ন্তন মনে করেন, “নিয়ম হিসেবে তো খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু বড় বাজেটের বা বড় স্টারদের ছবি ছাড়া অন্য ছবির ক্ষেত্রে এই নিয়ম কতটা কার্যকরী হবে সেটা সময় বলবে। তবে আমি এ বছর অনেকগুলো হল ভিজ়িটে গিয়ে বুঝেছি নতুন প্রজন্মকে আমাদের হলে টানতে হবে। যে করেই হোক তাদের ভালো লাগাটাকে বুঝে তাদের বাংলা ছবির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। একমাত্র তখনই আমরা বাংলা ছবির ভবিষ্যৎকে নিশ্চিত করতে পারব।”
Edited by Kamalendu Sarkar
Published by Prabuddha Neogi
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন





