সেরা ছবি ‘সীমাবদ্ধ’
স্টুডিয়ো সংবাদদাতা: গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে ১৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (National Film Awards) বিতরণী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এই উৎসব কলকাতায় প্রথম। অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নন্দিনী সৎপতি। প্রধান অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়।
কেন্দ্রীয় তথ্য ও বেতার মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ বর্তমানে শূন্য থাকায় (নন্দিনী এই সেদিন পর্যন্ত এ পদে ছিলেন) বিভাগের উপমন্ত্রী ধরমবীর সিংহই সকলকে স্বাগত জানিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পে বাংলার ঐতিহ্যপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। অতীতে নিউ থিয়েটার্স এবং বর্তমানে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, অসিত সেন, তপন সিংহ, ঋত্বিক ঘটকের মতো কৃতি চলচ্চিত্রকারদের শিল্পসৃষ্টি বিষয়ে নবধারা প্রবর্তনের কথা তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: ট্রিলজির শিরোপা দিতে এত কার্পণ্য কেন?
পুরস্কারপ্রাপকদের সংবর্ধিত করে ধরমবীর বলেন, “এটা অত্যন্ত আশার কথা যে এবারের পুরস্কৃত চলচ্চিত্রগুলিতে অধিকতর বৈচিত্র্য এবং গভীরতা পরিলক্ষিত হয়েছে।” অবশ্য সঙ্গে-সঙ্গে তিনি এ কথাও বলেন, “পঁচিশ বছরের স্বাধীনতার মধ্যে সংস্কৃতির অন্যান্য ক্ষেত্রে পুনরুজ্জীবন দেখা গেলেও চলচ্চিত্র শিল্পে ব্যবসায়ীদের অর্থলোলুপতাই প্রকট হয়ে ওঠে। আজকে ভারতীয়দের জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে যেখানে উন্নতির লক্ষণ সুপরিস্ফুট, সেখানে ব্যবসায়িক বুদ্ধিসম্পন্ন চলচ্চিত্র প্রযোজকেরা তাঁদের অগ্রগতির সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে চাইছেন না। তবে বিদ্রোহের সুর ধ্বনিত হচ্ছে এই শিল্পেও, যদিও সমগ্রের তুলনায় তা অত্যন্ত নগণ্য।”
ধরমবীর মনে করিয়ে দেন, “আজ ভারত পৃথিবীর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম চলচ্চিত্রনির্মাতা দেশ। কিন্তু গুণগত উৎকর্ষের দিক দিয়ে সে এখনও অনেক পিছনে।”
আরও পড়ুন: ‘এখনকার ছবি শুক্রবারে আবিষ্কার, সোমবারে পরিষ্কার’
সদ্য প্রয়াত পৃথ্বীরাজ কপূর, মীনাকুমারী ও দক্ষিণের অভিনেতা সত্যেনের পবলোকগমনে শোকপ্রকাশ করে নন্দিনী ও সিদ্ধার্থশঙ্করকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ধরমবীর বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ধরমবীরের ধন্যবাদজ্ঞাপনের পর ৯৯৭১ সালের চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ভিকে নারায়ণ মেনন তাঁর রিপোর্টে বলেন, “এবারে ২৬টি কাহিনিচিত্র, ৭টি শিশুচিত্র ও ২২টি হ্রস্বচিত্র বিবেচিত হয়েছে। হ্রস্বচিত্রগুলির মধ্যে আছে সংবাদচিত্র, শিক্ষামূলক চিত্র, সামাজিক তথ্যচিত্র, উন্নয়নমূলক চিত্র (ব্যবসাভিত্তিক ও তার বাইরের) পরীক্ষামূলক চিত্র এবং অঙ্কনচিত্র।”
পরে তিনি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত চিত্র, শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্পর্কে উপযোগী মন্তব্য পেশ করেন।
আরও পড়ুন: ”বাঞ্ছারামের বাগান’ না করা মস্তবড় ভুল ছিল’
এরপরে সিদ্ধার্থশঙ্কর প্রধান অতিথিরূপে তাঁর সরস বক্তৃতা দ্বারা দর্শকদের আনন্দবর্ধন করেন। তিনি যখন বলেন, শান্তি ও শৃঙ্খলারক্ষার কাজে অভিনেতা রাজ কপূর ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশের থেকে বেশি ক্ষমতা ধরেন, তখন তাঁর যুক্তি শুনে দর্শকবৃন্দ রীতিমতো চমৎকৃত হন। পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র শিল্পের সহায়তার জন্য রাজ্য সরকার যে কার্যকরী পন্থা গ্রহণ করেছে, সে সম্পর্কে তাঁর ঘোষণা অভিনন্দিত হয়।

সিদ্ধার্থশঙ্করের হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন রাজ কপূর
সবশেষে নন্দিনী সত্যজিৎ ও বাংলার চলচ্চিত্রকারদের শিল্পগত ও কলাকৌশল বিষযে নব-নব উন্মেষণ প্রতিভার প্রতি প্রশস্তিজ্ঞাপনের পরে ভারতের চলচ্চিত্র প্রযোজকদের অনুরোধ করেন, দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি নজর রেখে তাঁরা যেন চিত্রনির্মাণে ব্রতী হন।
আরও পড়ুন: অতি উত্তম! এটা সত্যজিৎ রায়ের ছবি
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রথমেই পৃথ্বীরাজকে মরণোত্তর দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার গ্রহণ করেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা রাজ কপূর। এর পরে ‘সীমাবদ্ধ’, ‘অনুভব’ ও ‘দো বুঁদ পানী’, সর্বভারতীয় ভিত্তিতে পুরস্কৃত এই তিনটি ছবির প্রযোজক, পরিচালক ও নায়িকাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পরে আঞ্চলিক ভিত্তিতে পুরস্কৃত হয় ‘ফির ভী’ (হিন্দী), ‘শান্তালা! কোর্ট চালু আহে’ (মরাঠি), ‘নিমন্ত্রণ’ (বাংলা), ‘অরণ্য’ (আসাম), ‘ভেগুলিপেন’ (তামিল), ‘মাত্তিলো মাণিক্যম’ (তেলুগু) ও ‘বংশবৃক্ষ’ (কন্নড়)। সেরা সঙ্গীত পরিচালক ও গীতিকারের পুরস্কার পান যথাক্রমে জয়দেব (‘রেশমা ঔর শেরা’) ও প্রেম ধবন (‘নানক দুখিয়া সব সংসার’)। হ্রস্বচিত্রে পুরস্কার লাভ করে ‘উইংস অব ফায়ার’ (শিশু চলচ্চিত্র), ‘ভুটান’ (তথ্যচিত্র), ‘রেকলেকসান্স’ (শিক্ষামূলক চিত্র) ও ‘আ ভিলেজ স্মাইলস’ (সামাজিক দলিল চিত্র)।
প্রথম প্রকাশ: অমৃত, আষাঢ় ১৩৭৯
Edited by Swati Chatterjee
Published by Prabuddha Neogi
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন





