Reviews

জুটি হিসেবে বেমানান হলেও অভিনয়গুণে সম্পন্ন

ছবি: দেবী চৌধুরাণী

পরিচালনা: দীনেন গুপ্ত

অভিনয়ে: সুচিত্রা সেন, রঞ্জিত মল্লিক, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, বসন্ত চৌধুরী, শেখর চট্টোপাধ্যায়, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা

সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটির রিভিউ করেছিল চিত্রদূত। WBFJA-এর পাতায় রইল সেই সমালোচনার পুনর্মুদ্রণ

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর উপন্যাসের পূর্বেকার চলচ্চিত্ররূপ ‘দেবী চৌধুরাণী’ (Devi Chowdhurani) পরিচালনা করেছিলেন সতীশ দাসগুপ্ত। নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সুমিত্রা দেবী। ব্রজেশ্বরের ভূমিকায় ছিলেন প্রদীপকুমার। ভবানী পাঠকের চরিত্রে ছিলেন নীতিশ মুখোপাধ্যায়। এ ছবি বেশিরভাগ দর্শকের দেখার সৌভাগ্য হয়নি, বলাই বাহুল্য।

যাই হোক আজকের দর্শকের কথাই বলি। তাদের ‘দেবী চৌধুরাণী’র আধুনিক সংস্করণ ভালো লাগবে। সুচিত্রা যে বিশ্বের অনন্যা অভিনেত্রী, তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’ এবং ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবির মধ্য দিয়ে। ‘দেবী চৌধুরাণী’তেও তিনি আবার প্রমাণ করলেন, বাংলার চলচ্চিত্র জগতে এখনও উনি মরমী অভিনয়ের মাধ্যমে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। সুমিত্রা দেবীর পরে এই ভূমিকায় অন্য কাউকে কল্পনা করা যায় না।

আরও পড়ুন: সুপ্রিয়া দেবীর হঠাৎ অবসর, বিপাকে প্রযোজক

অসামান্য রূপবতী অথচ অনাথা তরুণী প্রফুল্লর দিন কাটে কষ্টের মধ্যে। রূপের জন্যই জমিদায় হরবল্লভ তার একমাত্র পুত্র ব্রজেশ্বরের সঙ্গে প্রফুল্লর বিবাহ দেন। কিন্তু বরযাত্রীদের মনমতো খাওয়াতে না পারার কারণে গ্রামের ব্রাহ্মণরা রাগ করে বিবাহ বাসর ছেড়ে চলে যায়। তারা প্রফুল্লর মায়ের নামে ‘কুলটা’র অপবাদ আনে এবং প্রফুল্লকে বাগদির মেয়ে হিসাবে পরিচয় দিয়ে যায়।

গ্রামবাসীদের কথা বিশ্বাস করে জমিদার হরবল্লভ প্রফুল্লকে পরিত্যাগ করেন এবং ব্রজেশ্বরের আবার বিবাহ দেন। দারিদ্র্যের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে পাঁচ বছর পর প্রফুল্ল মাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসে তার অধিকার আদায় করে নিতে। হরবল্লভ ‘বাগদি মেয়ে’ পুত্রবধূকে সামান্য আশ্রয় দিতেও রাজি নন। প্রয়োজন হলে চুরি, ডাকাতি, ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করতে উপদেশ দেন।

আরও পড়ুন: অনীহা ছেড়ে পথে নামলেন সত্যজিৎ রায়

শাশুড়ির অনুরোধে সে রাত্রের মতো প্রফুল্ল থেকে যায়, ব্রজেশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাতের আশায়। তার সতীন সাগরের সাহায্যেই ব্রজেশ্বরের সঙ্গে রাত্রি কাটানোর সুযোগ পায় সে। স্বামীর কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়ে শ্বশুরের আদেশে তাকে ফিরে আসতে হয় গ্রামে। ফিরে এসে দেখে তার মা মারা গিয়েছে। এরপর প্রফুল্লর একাকীত্বের সুযোগ নিয়ে কুচক্রী সুবল দত্ত তাকে অপহরণ করে। পথে ডাকাতের ভয়ে ফেলে পালায়। প্রফুল্ল গহন বনের মধ্যে এক ভাঙা বাড়িতে জনৈক মুমূর্ষু বৈষ্ণবকে জল দিলে, প্রতিদানে তার কাছ থেকে কুড়ি ঘড়া মোহরের গুপ্তধন উপহার পায়।

মোহর ভাঙিয়ে জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে প্রফুল্ল ভবানী পাঠকের সাক্ষাৎ পায়। তিনি প্রফুল্লকে দেশব্রতে দীক্ষা দেন। শিক্ষাদীক্ষা শেষ করে কৃতিত্ব অর্জন করবার জন্যে প্রফুল্লকে ভবানী পাঠক দেবী চৌধুরাণী উপাধি দেন। ভক্তরা ও প্রজারা তাঁকে ‘মা’ বলে ডাকতে শুরু করে। ইংরেজদের অত্যাচার দমন করবার জন্য ভবানী পাঠকের অন্যতম শিষ্য রঙ্গরাজ ও অন্যান্য ডাকাতরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে দেবীর নেতৃত্বে ইংরেজদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: জাতীয় সঙ্কটে বাংলা ছবি, উদ্বিগ্ন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্যরা

পরে একদিন যখন হরবল্লভ, পুরস্কারের লোভে দেবীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ইংরেজ কুঠিয়ালদের নিয়ে আক্রমণ করলেন, তখন দেবী তার গুরু ভবানী পাঠকের কথা না মেনে সাদা পতাকা দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করল। আসলে কৌশলে ইংরেজ কুঠিয়ালদের বন্দি করবার জন্যই এক নতুন চাল চেলেছিল দেবী। এই চালে ইংরেজদের বন্দি করলেও, ব্রজেশ্বরের প্রেমের বন্ধনকে অস্বীকার করতে না পেরে দেবী আবার নতুন করে স্বামীর ঘরেই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তার জীবন আবার প্রফুল্ল হিসাবে শুরু হয়।

পূর্ববর্তী ছবির অভিনয়ের সঙ্গে কোনওরকম তুলনা না করেও বলা চলে নামভূমিকায় সূচিত্রা অপূর্ব অভিনয় করেছেন। তবে বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা প্রফুল্লর বিবরণ থেকে নায়িকাকে বেশ অনেকটাই বয়স্ক লেগেছে। ব্রজেশ্বরের ভূমিকায় রঞ্জিত চরিত্রানুগ অভিনয় করেছেন যদিও সুচিত্রার সঙ্গে তাঁর বয়সের ব্যবধান প্রায় প্রতিটি দৃশ্যে ধরা পড়েছে। জুটি হিসেবে তাঁরা বেমানান। ভবানী পাঠকের ভূমিকায় বসন্ত ও সাগরের চরিত্রে সুমিত্রার অভিনয় বলিষ্ঠ। অন্যান্য ভূমিকায় কালী, সত্য, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, ছায়া দেবী, পদ্মা দেবী, নীলিমা দাস, মঞ্জু ভট্টাচার্য, গীতা নাগ যথাযথ। কাজল গুপ্ত চিত্রনাট্যের দাবী মিটিয়েছেন। সঙ্গীত পরিচালনায় মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। আলোকচিত্রগ্রহণ এবং অন্যান্য কলাকৌশলের কাজ পরিচ্ছন্ন। দীনেনবাবুর পরিচালনা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।

প্রথম প্রকাশ: অমৃত, আশ্বিন ১৩৮১


Edited and Published by Prabuddha Neogi

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন

WBFJA

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *