Interviews

‘ছবি পরিচালনার জন্য এখনও প্রস্তুত নই’

কেরিয়ারের শীর্ষ সময় পেরিয়ে এসেও দম ফেলার ফুরসত নেই অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর (Rituparna Sengupta)। একই বছরে পরপর তিন-চারটি ছবি মুক্তি যে কোনও মেনস্ট্রিম নায়িকার কাছেও স্বপ্নের মতো। কয়েক মাসের মধ্যে পরপর মুক্তি পেল ‘পুরাতন’, ‘ম্যাডাম সেনগুপ্ত’, ‘গুডবাই মাউন্টেন’। এই মাসের শেষে মুক্তি পাচ্ছে ‘বেলা’। এক ছবির প্রমোশনের মধ্যেই চলছে পরবর্তী ছবি নিয়ে আলোচনা। সাক্ষাৎকার দেওয়ার পাশাপাশি বাড়ির খুঁটিনাটি প্রয়োজন থেকে রান্নাঘরের খোঁজখবর, সবটাই প্রায় দশ হাতে সামলাচ্ছেন তিনি। এসবের মধ্যেও ঠান্ডা মাথায় নানা প্রশ্নের জবাব দিলেন। প্রশ্ন করলেন স্বাতী চট্টোপাধ্যায়

প্রশ্ন: যত দিন যাচ্ছে বাংলা ছবির শো কমছে, দর্শক হলে যেতেই চাইছে না যেন। এর ওপর আছে ওটিটি মাধ্যমে ওয়েব সিরিজ়ের রমরমা। আগামী কয়েক বছরে কি সিনেমা হল-এ ছবি মুক্তি ধীরে-ধীরে কমে যাবে বলে মনে হয় তোমার?

ঋতুপর্ণা: আমার ধারণা সিনেমা থেকে যাবে। কারণ সিনেমার একটা আলাদা ডায়নামিক আছে। হলে বসে একটা ছবি দেখা, তার এফেক্ট, এইসব কোনওদিন ফিকে হওয়ার নয়। তবে অবশ্যই ছবিটা ভালো হতে হবে, মানুষ ঠিকই দেখতে যাবেন তাহলে। আমার ‘পুরাতন’ তো এত মানুষ দেখলেন। একেনবাবুর মতো একটা নতুন চরিত্র নিয়ে তৈরি ছবিও হইহই করে চলল। আসল কথা প্রডাক্টট ভালো হতে হবে। এখন দর্শক দেশ-বিদেশের নানান কনটেন্ট দেখছেন। তাই যেমন-তেমন করে কাজ করলে চলবে না। ভালো কাজ, ভালো স্ক্রিপ্ট এগুলোর আবেদন ঠিকই রয়েছে আর থাকবেও আগামী দিনে।

প্রশ্ন: তুমি যখন শুরু করেছিলে তখন একেকটা ছবির কাজ হত দু’তিনমাস সময় নিয়ে। সেখানে এখন ১০-১২ দিনে একটা ছবি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তুমি এই দুটো ফরম্যাটেই কাজ করেছ। কীভাবে ব্যাখ্যা করবে এটাকে? কোনটা প্রয়োজন একটা ভালো ছবির জন্য?

ঋতুপর্ণা: হ্যাঁ ঠিক, আমি দুটো ফরম্যাটেই কাজ করেছি বা করছি। আমার কোনওটাতেই অসুবিধা হয় না। আর এই যে চটজলদি শুট শেষ করে ছবি রিলিজ় করা এটার একটা কারণও রয়েছে যা অস্বীকার করা যায় না। খুব লম্বা শুটিং এখন সম্ভবই নয় করা, কারণ প্রতিদিন শুটিংয়ের খরচ এত বেড়ে গিয়েছে সে খুব বেশিদিন সেটা টানা সম্ভব নয়। আমার কিন্তু মনে হয় কম দিনে কাজ করেও ভালো ছবি তৈরি সম্ভব। প্রি-প্রোডাকশনের কাজটা ভালোভাবে করতে পারলে, কম দিনের কাজেও ভালো ছবি তৈরি করা যাবে। একটা জিনিস তো ঠিক, অল্পদিন অথচ টানা শুট মানে আমি সেই চরিত্রটার মধ্যে থাকতে পারছি। বরং অনেকদিন বাদে হলে সেই চরিত্রে ঢুকতে আমার সমস্যা হবে, হয়তো খুঁটিনাটি ভুলেও যাব। তাই যত্ন নিয়ে প্রস্তুতির কাজটা করতে পারলে কম দিনেও ভালো ছবি হতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস, হচ্ছেও তো কত।

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় সেরা সত্যজিৎ, হতভম্ব দর্শক

প্রশ্ন: আগেকার সেই নায়ক-নায়িকাকেন্দ্রিক ছবির সময়টার বদল হয়ে এখন চিত্রনাট্যই মুখ্য হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে একজন প্রযোজক হিসেবে দর্শক কী ধরনের ছবি দেখতে চান বলে তুমি মনে করো?

ঋতুপর্ণা: এখন সিচুয়েশন ধরে ছবি হচ্ছে। আগের সেই নায়ক-নায়িকা-ভিলেন ফরম্যাট এখন আর চলবে না। আগে মানুষ ছবি দেখতে যেত সময় কাটানোর জন্য। আনন্দ করার জন্য। এখন মানুষ ছবির বিষয় নিয়ে ভাবতে ভালোবাসে। তাই ভালো গল্প, ভালো চিত্রনাট্য দিতে হবে। দর্শক এখন হলে গিয়ে বাস্তব গল্পটাই দেখতে চায়। আবার তার মধ্যে বিনোদনও থাকতে হবে। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তো পাল্টায়। তাই আমার মতে এই দুটোর মিশেল যদি ঠিকঠাকভাবে করা যায় তাহলে মানুষ ছবি দেখবেন।

প্রশ্ন: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তোমার জুটি আজও জনপ্রিয়। বুম্বাদার সঙ্গে তোমার পঞ্চাশতম ছবি ‘অযোগ্য’ দর্শকের ভালো লেগেছে। অর্থাৎ এত বছর পরেও মানুষ তোমাদের একসঙ্গে দেখতে চান, এটার কারণ কী বলে মনে হয় তোমার?

ঋতুপর্ণা: এই জুটিটা আসলে একটা ম্যাজিক। এই তো ২৫ বছর পর ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ রি-রিলিজ় করল, আবার ‘প্রাক্তন’-এর এত বছর পর আমরা ‘অযোগ্য’ করলাম। দুটোই সুপারহিট। মানুষ দুটোই দেখেছেন, ভালোবেসেছেন। এই জুটিটার কোনও ব্যাখ্যা আমার কাছেও নেই, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও নেই। এই জুটি নিয়ে মানুষের আবেগ চিরন্তন। উত্তম-সুচিত্রার পর এরকমভাবে জুটি আর তৈরি হয়েছে কই! হয়তো আমরা যেদিন থাকব না তখনও এই জুটি নিয়ে আলোচনা হবে, হয়তো রেট্রস্পেক্টিভ হবে।

আরও পড়ুন: ‘এত নিষ্ঠুর, কৃপণ হবে ভাবিনি’

প্রশ্ন: ছবির সংখ্যাটা কি তাহলে আগামী কয়েক বছরে পঞ্চান্ন থেকে ষাটে পৌঁছতে পারে?

ঋতুপর্ণা: আমি আশা করব এই পঞ্চাশতম ছবিটা আরও এগিয়ে গিয়ে ষাটতম হোক। তবে তার জন্য ভালো গল্প চাই। ভালো চিত্রনাট্য চাই। এই ব্যাপারে আমি আর প্রসেনজিৎ দুজনেই খুব খুঁতখুঁতে। আমরা অনেককে না বলেছি। চিত্রনাট্য পছন্দ না হলে কিন্তু হবে না। গল্পে অবশ্যই রোমান্স থাকতে হবে। ‘অযোগ্য’তে যেমন সময় উপযোগী এবং আমাদের এই বয়সের উপযুক্ত একটা গল্প নিয়ে ছবি হয়েছে, তেমনই সমসাময়িক কোনও প্রেক্ষাপটে কোনও ভালো গল্প পেলে অবশ্যই আবার একসঙ্গে কাজ করব। তবে বিষয়টা অবশ্যই আমাদের দুজনের পছন্দ হতে হবে। আমরা দু’জনেই আশা রাখি তেমন কোনও গল্প আগামীদিনে পেতে চলেছি আমরা।

প্রশ্ন: এতবছর পর প্রযোজনায় এলে, এরপর কি পরিচালনায় আসার ইচ্ছে রয়েছে?

ঋতুপর্ণা: পরিচালনায় আসার ইচ্ছে নেই বলব না, তবে সেটা এক্ষুনি নয়। আমার আর একটু প্রস্তুতি লাগবে। অনেকে সবটা না জেনেই কাজ করতে চলে আসে। আমার মনে হয় এই জায়গায় আমার আরও কিছু শেখার বাকি আছে। পরিচালনা একটা সম্পূর্ণ আলাদা জগৎ। ওটার জন্য আমি এখনও প্রস্তুত নই।

ছবি: প্রতিবেদক


Edited by Kamalendu Sarkar
Published by Prabuddha Neogi

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন

WBFJA

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *