আরতির থেকে বিদায় নিতে এলেন সৌমিত্র
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee) ও আরতি ভট্টাচার্য (Arati Bhattacharya) অভিনীত ছবি ‘প্রেয়সী’ (Preyoshi) মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮২ সালে। দীর্ঘ চার বছর লেগেছিল ছবিটা তৈরি হতে। ১৯৭৮ সালে সেই ছবির সেটে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক স্বপনকুমার ঘোষ। WBFJA-এর পাতায় রইল সেই প্রতিবেদেনের পুনর্মুদ্রণ
‘প্রেয়সী’ আরতি ভট্টাচার্য এতক্ষণ চুপচাপ বসেছিলেন ফ্লোরের বাইরে। প্রায় প্রতিদিনই লোডশেডিংয়ের কারণে বারবার বিঘ্নিত হচ্ছে একাধিক ছবির শুটিং। হঠাৎ আলো এল। সঙ্গে-সঙ্গে হৈ হৈ রব উঠল। কলাকুশলীরা সব হুড়মুড় করে ফ্লোরে ঢুকলেন। তাড়াতাড়ি প্রস্তুতিপর্ব শেষ হলো। যতক্ষণ আলো থাকবে ততক্ষণ কাজ। পরিচালক শ্রীকান্ত গুহঠাকুরতা চাইলেন আলো থাকতে-থাকতে যেন যতগুলো সম্ভব শট টেক করে নেওয়া যায়।
দুই প্রধান শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও আরতির ডাক পড়ল। দু’জনে চলে এলেন। ক্যামেরার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন। ছবিতে সুকান্তর ভূমিকায় রয়েছেন সৌমিত্র আর নন্দিনীর চরিত্রে রয়েছেন আরতি। ভগীরথের ভূমিকায় রয়েছেন সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দিনীর থেকে বিদায় নিতে এসেছে সুকান্ত।
আরও পড়ুন: ছবিতে প্রথমবার রূপম ইসলামের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান
এক মুহূর্ত কী যেন ভেবে সুকান্ত বলল: তাহলে আমি চলি।
নন্দিনী: বাবার কিন্তু খুব ইচ্ছে ছিল আপনি এখানেই থাকুন।
সুকান্ত: আর আপনার ইচ্ছেটা কী শুনি?
নন্দিনী: আমাদের জন্য আপনার কোনও অসুবিধে হোক এটা আমি চাই না। তবু উপায় নেই বলে…
সুকান্ত: তাহলে আর মিথ্যে ভেবে লাভ কী বলুন। তার চেয়ে বরং ভগীরথদা এখানে থাকুক। তাতে আপনাদের সুবিধেই হবে।
আরও পড়ুন: ‘এখনকার ছবি শুক্রবারে আবিষ্কার, সোমবারে পরিষ্কার’
ঘরে ঢুকতে-ঢুকতে ভগীরথ বলল: হ্যাঁ তাই তো, নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে এসে এখন এই বুড়ো ভগীরথকে আর না বিলোলে চলছে না।
সুকান্ত: তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
ভগীরথ: না, তা আর ভাবব কেন? তোমার উপকার কেউ কোনওদিন করতে পেরেছে কি? ছোট থেকে মানুষ করলাম। এখন বলছ আমাকে ভাবতে হবে না (ভগীরথের চোখের জল গড়িয়ে পড়ে)। নেহাত কর্তাবাবু যাওয়ার সময় হাতে ধরে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন তাই। না হলে আমার কী? যা গোঁয়াড় গোবিন্দ তুমি। তোমার সঙ্গে ঘর করা চলে? মায়া…মায়াতেই মরেছি।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় সেরা সত্যজিৎ, হতভম্ব দর্শক
সুকান্ত: আচ্ছা বাবা, আচ্ছা। অন্যায় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দেখো, বাবা বেঁচে নেই বলে এঁদের কোনও অযত্ন যেন না হয়।
ভগীরথ: সে আর তুমি কী বলবে? কিচ্ছু ভেবো না। আমি তো রইলাম।
নন্দিনী: আমার কিন্তু সত্যিই খুব খারাপ লাগছে।
সংলাপ এই পর্যন্ত আসতেই দু’জনের মুখের ওপর থেকে আলো উধাও! আবার অন্ধকার গ্রাস করে ফেলল গোটা ফ্লোর। এই পরিস্থিতির জন্য কেউ তৈরি ছিল না। সকলেরই খুব মন খারাপ। তবু উপায় নেই। আবার শুরু হলো অপেক্ষা।
Published by Prabuddha Neogi
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন





