Flashback

রানিকে গয়না পরিয়ে দিলেন রাজা

স্টুডিয়ো সংবাদদাতা: ফুলশয্যার রাতে জামাইরা যেমন সাজে, তেমনই সেজেগুজে উত্তমকুমার (Uttam Kumar) একটা পালঙ্কের ওপর শরীরটা এলিয়ে দিয়েছিলেন। পাশে বসে দশ্যটা বিস্তারিত বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন পরিচালক পীযূষ বসু। অনতিদূরে দাঁড়িয়ে সুপ্রিয়া দেবী (Supriya Devi) হাতের তালুর ওপর থুতনিখানা রেখে একদৃষ্টিতে সাগ্রহে শুনছিলেন। ক্যামেরা তখন ক্রেনে, একবার এগিয়ে যাচ্ছে, একবার পিছিয়ে আসছে। এই করতে-করতে পজ়িশন পাওয়া গেল। ছবির নাম ‘সন্ন্যাসী রাজা’ (Sannyasi Raja)

বিরাট শুটিং জ়োন। বলতে গেলে নিউ থিয়েটার্সের এক নম্বর স্টুডিয়োর একটা গোটা ফ্লোর জুড়েই রানির ঘরের সেট পড়েছে। রানি—সুপ্রিয়া—প্রায় বিয়ের সাজ সেজেছেন। টকটকে লাল রঙের বেনারসি, নাকে কানে গলায় ভর্তি গয়না।

আরও পড়ুন: ‘ময়লা কাপড়টাও বদলে নিতে দিল না বুড়ো’

মোদ্দা ব্যাপারখানা কী জানতে চাইলে পীযূষবাবুর অন্যতম সহকারী উদয় গুপ্ত বললেন, “আজ ওদের বিবাহ বার্ষিকী। মানে রাজা-রানির। এমন একটা শুভ দিনে রাজা কিছুক্ষণের জন্য রানিকে ছেড়ে সমাজসেবা করতে বেরিয়েছিলেন। এজন্য রানির অভিমান হয়েছে। রাজা মানভঞ্জন করবেন, রানিকে একখানা দামী নেকলেস উপহার দেবেন। পরিয়ে দেবেন। খুব রোম্যান্টিক ব্যাপার।”

সুপ্রিয়া ব্যাক টু ক্যামেরা দাঁড়ালেন। উত্তমকুমারের সঙ্গে-সঙ্গে ক্রেন এগিয়ে গেল ফ্লোরের শেষ প্রান্তে। নির্বাক, নিস্তব্ধ কয়েকটা মুহূর্ত। আলো জ্বলে উঠল। ক্ল‍্যাপস্টিক পড়ল। রাজা উত্তমকুমার মৃদু গলায় রানির নাম ধরে ডাকলেন, ‘ইন্দু।’

আরও পড়ুন: ‘এতগুলো মালয়ালম ছবি করার পর ভাষাটা রপ্ত হয়ে গিয়েছে’

রানি ইন্দু কথা বলবেন না এমন একটা ভঙ্গি করে ক্যামেরার দিকে মুখ ফিরিয়ে এগিয়ে আসতে-আসতে সংলাপ বললেন, বলা ভালো ভেঙে পড়লেন, ‘তোমাকে আমি একটা অনুরোধ করছি। তুমি আমাকে যত ইচ্ছে কষ্ট দাও। শুধু সবার কাছে আমার মাথা হেঁট করো না।’

ক্রেন পিছিয়ে আসতেই বিপত্তি হয়েছিল আর কী! টেবিলের ওপর রাখা কাচের ল্যাম্পটি পড়ে যাচ্ছিল ধাক্কা লেগে। কে একজন সময় মতো এসে ধরে ফেললেন।

শট কেটে দেওয়া হল। আলো একটু অদলবদল করা হল। এই ফাঁকে আমাদের পত্রিকার আলোকচিত্রী সুকুমার রায়, পীযুষবাবুকে একখানা ছবি প্রেজ়েন্ট করলেন। ছবিতে সন্ন্যাসীর মেকআপে উত্তমকুমারকে নির্দেশ দিচ্ছেন পীযুষবাবু।

Uttam Kumar

ছবিখানা দেখে সুপ্রিয়া মন্তব্য করলেন, “একদম মেয়ে-মেয়ে লাগছে।”

নিজের সম্পর্কে রসিকতা করলে উত্তমবাবু রসিক হতে পারেন না। বললেন, “মেয়েদের পার্ট না করলে বড় অভিনেতা হওয়া যায় না। তার ভুরি-ভুরি উদাহরণ আছে।” নাম বললেন কয়েকজনের। পীযুষবাবু একজন আন্তর্জাতিক মানুষের নাম করলেন যিনি প্রথম জীবনে ভালো অভিনেতা ছিলেন এবং বেশ কয়েকবার মহিলা সেজে স্টেজে উঠেছিলেন।

এই ছবির স্টার কাস্ট বিরাট। উত্তম, সুপ্রিয়া ছাড়াও আছেন রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুলতা চৌধুরী, তরুণকুমার, কল্যাণী মণ্ডল, শম্ভু ভট্টাচার্য, কল্যাণী অধিকারী, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, মণি শ্রীমানি এবং এককালের অভিনেত্রী প্রমিলা ত্রিবেদী। চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা ও সম্পাদনায় রয়েছেন যথাক্রমে বিজয় ঘোষ, সূর্য চট্টোপাধ্যায় এবং বৈদ্যনাথ চট্টোপাধ্যায়। প্রধান সহকারী পরিচালক জয়ন্ত বসু। ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করছেন নচিকেতা ঘোষ।

প্রথম প্রকাশ: অমৃত, শ্রাবণ ১৩৮১


Edited and Published by Prabuddha Neogi

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন

WBFJA

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *