Flashback

আশুতোষ দর্শকের কথা ভেবে

মিঠু মুখোপাধ্যায় ও রঞ্জিৎ মল্লিক অভিনীত ছবি ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৫ সালে। টালিগঞ্জে সেই ছবির সেটে উপস্থিত ছিলেন নির্মল ধর। WBFJA-এর পাতায় রইল সেই প্রতিবেদনের পুনর্মুদ্রণ

মিঠুকে একদম গাঁইয়া দেখাচ্ছে। মিঠু মুখোপাধ্যায় (Mithu Mukherjee)। উনিশ বা কুড়ি বছর বয়স। ডাগর-ডাগর দু’টি চোখ, বাংলা ছবির অন্যতম উঠতি নায়িকা বসে আছেন আয়নার সামনে, ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর মেকআপ রুমে। ফ্লোর থেকে ডাক পড়েছে, তাড়াতাড়ি…তাড়াতাড়ি। কিন্তু তাড়াতাড়ি কী করে হবে? বেচারা চুল নিয়ে নাজেহাল! পার্ক স্ট্রিটের নামী দোকানের দামী হেয়ার-ডু এই গরমে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছে।

“ধুর আর পারি না,” বলে মিঠু চুলগুলো গোছাবার চেষ্টা করল।

উঁহ, ঠিক হচ্ছে না। ছুটে এলেন মেকআপম্যান। বললেন, “গ্রামের মেয়ে আপনি। শ্যাম্পু করা বোঝা গেলে আমি তো মারা যাব ম্যাডাম। চুল থাকবে পরিপাটি, তেল চপচপে, মা লক্ষ্মীদের যেমন থাকে।”

আরও পড়ুন: ‘সমাজের কীট বলেই ভাবত আমাদের’

মিঠু এই শুনে হেসেই কুটিপাটি, “বেশ বলেছেন। মা লক্ষ্মীদের যেমন থাকে! তা কথা তো অনেক হলো এখন কী হবে? চুল যে কিছুতেই বাগ মানে না।”

“হচ্ছে-হচ্ছে, আপনি একটু স্থির হয়ে বসুন তো। ওদিকে পরিচালক মশায় অধৈর্য হয়ে উঠছেন।”

“সত্যি তো…এই দেখুন এক্কেবারে স্থির। একটুও নড়ছি না।”

আরও পড়ুন: ‘এতগুলো মালয়ালম ছবি করার পর ভাষাটা রপ্ত হয়ে গিয়েছে’

চুল ঠিক হতে-হতে মিঠু চুপচাপ চরিত্রের মধ্যে চলে গেল। ব্যস, সঙ্গে-সঙ্গে অন্যমনস্ক। কেউ কথা বললে উত্তর দেয় না। শুধু সিনেমার হাসি হাসে। ফ্লোরে পা দিয়ে পরিচালকের কাছে চলে গেল সোজা। একমনে শুনে নিল তাকে কী-কী করতে হবে। এল শুটিং জ়োনে। মা লক্ষ্মীই বটে। রাজাবাবু সশরীরে এসেছিলেন চণ্ডীর বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে। এসে দর্শন করলেন সাক্ষাৎ লক্ষ্মী প্রতিমা। চটপট বুদ্ধি খেলে গেল তার মাথায়। শাস্তি! চরম শাস্তি দিতে হবে! করালী কবিরাজ ভয়ে তটস্থ। তার ঘরে রাজাবাবুর আগমন। বাঁদর মেয়েটোর জন্য! শাস্তি নিশ্চয়ই নিতে হবে। মাথা পেতে নিতে হবে।

কবিরাজ মশায়ের জীর্ণ কুটিরে রাজাবাবুর অঙ্গীকার ঘোষিত হলো, ‘আমি আপনার কন্যাকে বন্দী করে রাখতে চাই, সারা জীবন। আমি ওকে পুত্রবধূ করে আমার ঘরে নিয়ে যেতে চাই।’

আরও পড়ুন: ‘পচা দুর্গন্ধ ছড়ালে, প্রতিবেশীরাই এসে দাহ করবে’

রাজাবাবু মনে-মনে বললেন, ‘হ্যাঁ, এই মেয়ে আমার চাই। অশান্ত পশুকে শায়েস্তা করবার জন্য এই হচ্ছে উপযুক্ত মেয়ে।’

কবিরাজ বিশ্বাস করতে চাইলেন না। কী করে করবেন? রাজাবাবুর পুত্রবধূ হওয়ার যোগ্যতা কি তার মেয়ের আছে! বাঁদর মেয়ে! আজ এর বাগানের আম পেড়ে আনে, কাল ওর বাগানের। কেউ অন্যায় করলে নিজে হাতে শাস্তি দেয়। শিশুদের নিয়ে মশগুল থাকে। মাসে-মাসে শিশুসভা করে। বাড়িতে থাকে না মোটেই। গেছো মেয়ে। ফলে প্রতিদিনই কবিরাজ মশায়কে নালিশ শুনতে হয়। নালিশ শুনতে-শুনতে তার কান ঝালাপালা হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘কন্যাদায়গ্রস্ত এক বয়স্ক ভদ্রলোক সাহায্য চাইতে এলেন’

রাজাবাবু সময় অপচয় করতে চান না। তিনি মেয়েকে আশীর্বাদ করে যেতে চান। শাঁখের ফুঁ, উলুধ্বনি সমারোহে আশীর্বাদপর্ব শেষ হলো। দৃশ্যও এখানে শেষ।

ছবির নাম ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ (Swayamsiddha)। পরিচালনা করছেন সুশীল মুখোপাধ্যায়। স্মরণ থাকতে পারে, এই নিয়ে ইতিমধ্যে একাধিকবার ছবি হয়েছে। সুতরাং এ ছবিকে পুননির্মাণ বা রিমেক বলাই শ্রেয়। প্রায় বিগত যুগে মনিলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রচনার চিত্ররূপ দান করেছিলেন নটশেখর নরেশ মিত্র। নায়িকা সেজেছিলেন দীপ্তি রায়। তাঁর অভিনয় আজও অনেকের স্মৃতিপটে অক্ষয় হয়ে আছে। সে সময় নায়ক চরিত্রে রূপদান করেছিলেন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: ‘এক ফিল্ম হিরোর কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি’

নতুন ‘স্বয়ংসিদ্ধা’য় গুরুদাস আছেন এক পার্শ্বচরিত্রে। নায়ক রঞ্জিত মল্লিক (Ranjit Mallick) এবং খলনায়ক অভিজিৎ সেন। অভিজিৎ অভিনেতা অসিত সেনের পুত্র এবং পুনা ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা হোল্ডার। গুরুদাস এই পর্যায়ের শুটিংয়ে অংশ নিলেন। অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে করালী কবিরাজের ভূমিকায় ছিলেন কালী বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজাবাবুর চরিত্রে সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। ছায়া দেবী, রসরাজ চক্রবর্তী এবং ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গেল। ছবির চিত্রগ্রণ করছেন কানাই দে। শিল্প নির্দেশনায় আছেন প্রসাদ মিত্র।

অবসরে পরিচালকের সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানালেন, “আগের ‘স্বয়ংসিদ্ধা’র সঙ্গে এ ছবির অমিল সামান্যই। শুরু এবং শেষটা নতুনভাবে ভাবা হয়েছে। শুরুতে দেখানো হচ্ছে মেয়েটা দুর্দান্ত। তার কার্যকলাপ রীতিমত রোমাঞ্চকর। এককথায় ডানপিটে মেয়ে। কিন্তু সামনে অন্যায় দেখলে রুখে দাঁড়ায়। এই তার স্বভাব। বিয়ের পর মেয়েটির পরিবর্তন দেখানো হচ্ছে। পরিবর্তন হচ্ছে ধীরে-ধীরে। শেষে সে তার নিজস্ব মূর্তি ধারণ করছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে কিডন্যাপিং, ফাইটিং থাকছে। বম্বের ছবিতে যেমন থাকে। আশুতোষ দর্শকের মুখের দিকে তাকিয়ে, নিজের জীবন এবং জীবিকার কথা ভেবে এই ছবি তৈরি করতে এগিয়ে এসেছি আমি। চিত্রনাট্য রচনা করে আমাকে সাহায্য করেছেন শ্যামল গুপ্ত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক নচিকেতা ঘোষ।”

প্রথম প্রকাশ: অমৃত, আশ্বিন ১৩৮১


Edited and Published by Prabuddha Neogi

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন

WBFJA

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *