আমার জেঠু উত্তমকুমার
খুব ছোট্ট বয়স থেকে উত্তমকুমারের স্নেহ, ভালোবাসা, আদর, পরামর্শ পেয়েছিলেন তরুণকুমারের কন্যা। ‘অগ্নীশ্বর’-এর শুটিংয়ে তিনি জেঠুর সফরসঙ্গীও ছিলেন। স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন ঝিমলি বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনলেন অশোক সেন
প্রথমেই বলে রাখি, তাঁকে কোনওদিন জেঠু বলে ডাকতাম না। ‘জ্যাজান’ বলে ডাকতাম। ওই নামে কেন ডাকতাম, সেটা এখানে উল্লেখ করতে চাই না। একটু রহস্য থাক না! জেঠু যখন ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই এই পার্থিব জগৎ ছেড়ে চলে গেলেন, তখন আমার বয়স মাত্র ১৬। জ্যাজানের মৃত্যুসংবাদ যখন পেলাম তখন আমি বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিলাম। তাঁর সাহচর্য, স্নেহ ভালোবাসা, আদর, আশীর্বাদ যতদিন পেয়েছি, তা আমার জীবনে সব স্মরণীয় অধ্যায়। ওই প্রাপ্তিগুলো স্বর্ণাক্ষরে আজও লেখা রয়েছে। সেই পুরনো পৃষ্ঠাগুলো উল্টে স্মৃতির ঝাঁপি খোলার চেষ্টা করছি। হয়তো সব কথা ক্রমানুসারে বলতে পারব না।
আমার বাবা তরুণকুমার, মা সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়। জেঠু উত্তমকুমার (Uttam Kumar)। একটু পূর্বকথা দিয়েই শুরু করা যাক। জেঠুর জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, উত্তর কলকাতার আহিরীটোলায়। প্রথমে চক্রবেড়িয়া স্কুলে, পরে সাউথ সুবার্বান স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। গভর্নমেন্ট কলেজে (বর্তমান নাম গোয়েঙ্কা কলেজ) ভর্তি হয়েছিলেন। শুনেছি, অভিনয়ের টানে আর পরীক্ষা দেননি। তাঁর প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ১৯৪৮ সালে নীতিন বসুর ‘দৃষ্টিদান’। তবে তাঁর ‘মায়াডোর’ ছবি মুক্তি পায়নি। উল্লেখ্য, তিনিই প্রথম অভিনেতা যিনি ১৯৬৭ সালে ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ এবং ‘চিড়িয়াখানা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ‘ভরত পুরস্কার’ পান। তাছাড়া সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবির জন্য তিনি বার্লিনে গিয়েছিলেন। সেসব এখন ইতিহাস।
আরও পড়ুন: পরিবেশ-রাজনীতির এক মায়াবী ইস্তাহার
১৯৬৩-৬৪ সালের কথা দিয়ে শুরু করছি। আমার জন্ম ১৯৬৪ সালে। আমি যখন জন্মেছিলাম সেইসময় জেঠু ভবানীপুরের ৪৬এ, গিরিশ মুখার্জি রোডের বাড়িতে থাকতেন না। চলে গিয়েছিলেন ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে। সেখানেই থাকতেন। তবে নিয়মিত আসতেন। ভবানীপুরের বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক মোটেই ছিন্ন করেননি। কলকাতায় থাকলে শুটিংয়ে যাওয়ার আগে প্রতিদিন ঠাকুমাকে প্রণাম করে যেতেন। মা-বাবার প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ছিল। ঠাকুমাও তাঁর ‘খোকা’কে খুব স্নেহ করতেন।
মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত জেঠুর স্নেহ, ভালোবাসা, আদর, পরামর্শ পেয়েছি। একটা সময় তো জেঠুর সফরসঙ্গী ছিলাম। বাড়ির আদরের মেয়ে ছিলাম আমি। গৌতমদা (জেঠুর ছেলে) বড়, আমি ছোটবোন।
আরও পড়ুন: মৃণাল সেনের ছবি থেকে বাদ পড়লেন অমিতাভ বচ্চন
আমি জেঠুকে দেখেছি, প্রতিদিন ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠতেন। যত রাতেই বাড়ি ফিরুন না কেন, ভোরবেলা তাঁর ওঠা চাই। তাঁর এই অভ্যাসের কখনও অনিয়ম হয়নি। জল-ঝড়-বৃষ্টি কিছুই মানতেন না। ভোর চারটে বাজলে ঘরে আর মন বসতো না। ফাঁকা সবুজ মাঠ তাঁকে যেন ডাকত। উনি এমন সময় মর্নিংওয়াকে যেতেন তখন কাকপক্ষীও টের পেত না। অন্য প্রাতঃভ্রমণকারীরা যাওয়ার আগেই উনি বাড়ি ফিরে আসতেন। দেখেছি, ঘুম থেকে উঠেই চোখে-মুখে জল দিয়ে সোজা গাড়ি বার করে ভিক্টোরিয়ায়। আমি ছোটবেলায় অবাক হয়ে দেখতাম এই বিস্ময়কর মানুষটাকে। কোনও ক্লান্তি নেই। ঘড়ির অ্যালার্মের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে চলতেন। যখন ভবানীপুরে থাকতেন তখন প্রতিদিন নিজে গাড়ি চালিয়ে ভিক্টোরিয়ায় চলে যেতেন। সেখানেই শরীরচর্চা করতেন। যখন ময়রা স্ট্রিটে থাকতেন তখন বেলভিউ নার্সিংহোমের সামনে পার্কটায় হাঁটতেন। ওঁর সাদা গেঞ্জি এবং সাদা হাফ প্যান্ট দারুণ পছন্দের ছিল।

উত্তমকুমারের মায়ের কোলে ঝিমলি
এ প্রসঙ্গে অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘অগ্নীশ্বর’ ছবির শুটিংয়ের কথা এসেই পড়ে। এ ছবির আউটডোরে জেঠুর সঙ্গী ছিলাম। আমার মায়ের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলাম। যেখানে শুটিং হয়েছিল ওখানে একটা বিশাল লেকের মতো ছিল। সেখানে গিয়েও জেঠু মর্নিংওয়াক করতেন। ভোর চারটের সময় উঠতেন। আমাকে সঙ্গে নিয়ে বলতেন ‘চল’। আমিও যেতাম। উনি জোরে-জোরে হাঁটতেন। আমাকেও বলতেন, ‘তুইও হাঁটা অভ্যাস কর।’ আমার অল্পবয়স ওঁর সঙ্গে হেঁটে পারতাম না। মাঝে-মাঝে থেমে যেতাম। উনি হেসে বলতেন, ‘তাহলে একটু বিশ্রাম কর।’ এ কথা বলার উদ্দেশ্যই হল যে উনি অন্য কিছুর রুটিন ব্রেক করলেও ভোরে হাঁটার নিয়ম কোনওদিনও ব্রেক করেননি।
উনি কেন ‘অগ্নীশ্বর’-এর শুটিংয়ে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন, পরে সেই রহস্য উদঘাটন করেছিলাম। আমার বাবা এবং জ্যাজানের একটা ‘রোগ’ ছিল। রাতে শোয়ার সময় কাউকে তাঁদের গা-হাত-পা টিপে দিতেই হবে। জেঠু কলকাতায় থাকলে বংশীদা (জেঠুর ডানহাত এবং রান্নার ঠাকুর) পা টিপে দিতেন। কিন্তু আউটডোরে গেলে? সেবার কাউকে পাননি। ছিলাম আমি। টানা সাতদিন রাতে জেঠুর সেবা করেছিলাম। জেঠু খুব গল্প, উপন্যাস পড়তে ভালোবাসতেন। তাঁর লাগেজে বই থাকবেই। রাতের বেলায় বই পড়তে-পড়তে ঘুমিয়ে পড়তেন। আমাকে বলতেন, ‘বইয়ের পৃষ্ঠায় চোখ রাখলে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।’
আরও পড়ুন: ‘এতগুলো মালয়ালম ছবি করার পর ভাষাটা রপ্ত হয়ে গিয়েছে’
সে যাইহোক, জেঠু আমাকে নিয়ে ঘুমোতেন। ওঁর একটা বাজে অভ্যেস ছিল, উপুড় হয়ে কাঁধের ওপর বালিশ নিয়ে শুতেন। ভীষণ নাক ডাকতেন। আমি পা টিপতাম আর ওঁর নাক ডাকা শুনতাম। মাঝে-মাঝে হাত থেমে গেলে বলতেন, ‘কী রে ঝিমলি, তোর ঘুম পাচ্ছে? তাহলে ঘুমিয়ে পড়।’ জেঠু আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়তেন। আমাদের পাশের ঘরে বেণু আন্টি (সুপ্রিয়া দেবী) এবং মা থাকতেন।
ঠিক চারটে বাজলেই ডাক পাড়তেন জেঠু। বলতেন, ‘ওঠ, মর্নিংওয়াকে চল।’ যেতেই হতো। ফিরে এসে কিছুক্ষণ বাংলোর বারান্দায় বিশ্রাম নিতেন। তারপর ব্রাশ করতেন। স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট। উনি ব্রেকফাস্টে বসলে সকলকেই ডেকে নিতেন। ইউনিটের সকলে একসঙ্গে বসতাম।
আরও পড়ুন: ‘এক ফিল্ম হিরোর কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি’
জেঠু ভীষণ ব্যক্তিত্ববান পুরুষ ছিলেন। ‘অগ্নীশ্বর’-এর শুটিংয়ে তাঁর ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ দেখেছিলাম। শট নেওয়ার আগে কী গভীর অনুশীলন, স্থিতধী। চোখের সামনে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না! যেমন ব্যক্তিত্ব তেমনই কণ্ঠস্বর! আমার বাবা যেমন হইহুল্লোড় পছন্দ করতেন, জেঠু ছিলেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত। সবসময় ধীরস্থির থাকতেন। আমার মনে হয়, যদিও তাঁকে কোনওদিন জিজ্ঞাসা করার সাহস পাইনি, তবু মনে হয়েছে উনি সবসময় ওঁর ‘ক্যারেক্টর’ নিয়ে ভাবতেন। ফ্লোরে গিয়ে কীভাবে শট দেবেন। বাড়িতে নিজেও অভিনয় নিয়ে খুব অনুশীলন করতেন। মায়ের মুখে শুনেছি, যতক্ষণ না শট মনের মতো হচ্ছে ততক্ষণ স্বস্তি পেতেন না। রিটেক করতেন। অনেকসময় ডিরেক্টর ‘ও কে’ বললেও ওঁর মনের মতো না হলে ফের শট দিতেন। উনি যে কাজটা করতেন, তা নিখুঁতভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়তেন না। কাজের প্রতি এত নিষ্ঠা, ভালোবাসা ছিল বলেই তিনি সকলের কাছে ‘মহানায়ক’ হতে পেরেছিলেন।
লক্ষ্মীপুজোর প্রসঙ্গে আসি। দুর্গাপুজোর আগে থেকেই আমাদের বাড়ির লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি, পরিকল্পনা চলত। আমার ঠাকুরদা এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন জেঠু। আমরা যখন ছোট তখন পুজোর আয়োজন বিশেষ ছিল না। তখন জ্যাঠতুতো, খুড়তুতো বোন, জেঠিমা, কাকিমারা ভোগের রান্নার আয়োজন করতেন। ছাদে বসে সক্কলে মিলে কুটনো কুটে রাখতেন। দেখেছি, জেঠু হঠাৎ ছাদে উঠে তদারকি করতেন। কাজের বাইরে ভীষণ আমুদে ছিলেন তিনি। ছাদে উঠে সকলের সঙ্গে একটু রসিকতা, ইয়ার্কি-ঠাট্টা করে চলে যেতেন। আমার বাবাও মাঝে-মাঝে জেঠুর কথার সঙ্গে তাল মেলাতেন।

মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে তরুণকুমার
লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন রাতে আমাদের খুব মজা হতো। সব্বাই একসঙ্গে মিলিত হতাম। পরবর্তীকালে জেঠুর হাত ধরে পুজোর পরিধি বাড়ল। আয়োজনও বাড়ল। তখন আমাদের মা-জেঠিমারা শুধু ভোগের রান্নার ব্যবস্থা করতেন। বাকি রান্না করতেন হালুইকর। তখন তো নিমন্ত্রিতের সংখ্যা অনেক। জেঠু নিজে পুজোয় বসতেন। জেঠুর পুজো দেখতে অনেকেই আসতেন। প্রতিবেশীরা ছাড়া স্টুডিয়োপাড়ার অনেকেই আসতেন। আমি বহু গুণী মানুষদের দেখেছি। ওইদিন আমাদের গিরিশ মুখার্জি রোডের বাড়ির দ্বার অবারিত। জেঠু কাউকে বারণ করতেন না। নিজে পরিবেশন করতেন। কোনও ক্লান্তি নেই। চুনোট ধুতি, গিলে করা পাঞ্জাবি পরা মানুষটিকে দেখতে তখন ঈশ্বরতুল্য। তাঁর হাসিতে, চোখে-মুখে একটা আলাদা জ্যোতি দেখতে পেতাম। লক্ষ্মীপুজোর দিন জেঠু একেবারে অন্যরকম। সেই ছবি এখনও চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
জেঠুর মৃত্যুর পর পুজো থেমে থাকেনি। হয়তো আয়োজন কিছুটা কমেছে। নিষ্ঠাসহ পুজো হচ্ছে। জেঠিমা, মা-বাবা, আমরা ভাই-বোনেরা পুজো করে চলেছি। এখন তৃতীয় প্রজন্মের হাতে পুজোর ভার। বাংলা সিনেমার কথা এবং উত্তমকুমার প্রসঙ্গে কিছু লেখা হলেই ভবানীপুরের চ্যাটার্জিবাড়ির লক্ষ্মীপুজোর কথা আসবেই। আমি সেই বাড়ির সন্তান, আমার ভীষণ গর্ব হয়। আমাদের তো স্টার ফ্যামিলি। জেঠু, মা, বাবা সকলেই অভিনয় জগতের মানুষ। নিত্যদিন বহু স্টার, সেমি-স্টার, পরিচালক, প্রযোজকদের দেখেছি। পরবর্তী কালে তাঁদের নাম জেনেছি। তাঁরা সকলেই চিত্রজগতের গুণী মানুষ। সুরকার, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পীদের যাতায়াত ছিল। সেই অর্থে আমরা ভাইবোনেরা ভাগ্যবান।
আরও পড়ুন: ভয়ের ছবিতে তনুশ্রী, দেবরাজ
তবে আমাদের পরিবার ছিল রক্ষণশীল। জেঠু-বাবা-কাকারা আমাদের খুব শাসনের মধ্যে রেখেছিলেন। এ কথা এখন শুনলে অনেকেই অবাক হন। উত্তমকুমারের বাড়ির সদস্য বলে আমাদের মধ্যে তেমন কোনও ভ্যানিটি ছিল না। জেঠু-বাবা ওসব একেবারে পছন্দ করতেন না। বলতেন, ‘কখনও বড়াই করবে না। জেঠু-বাবার নামে নিজেদের পরিচয় দেবে না। তোমার কাজই তোমাকে পরিচিতি এনে দেবে। এইভাবে জীবন তৈরি করো।’
আমরা অতি সাধারণভাবেই মানুষ হয়েছি। আমার বাবা খুব খোলামেলা ছিলেন। মানুষের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতেন। যখন উনি স্টার তখনও যদুবাবুর বাজারে গিয়ে বাজার করতেন। সেই ধারাবাহিকতা আমরাও বজায় রেখেছি। স্থানীয় মানুষরা আমাকে সকলেই চেনেন তরুণকুমারের মেয়ে হিসেবে। আমিও এখনও নিজে বাজার করি। ফুটপাথে চাষিদের কাছ থেকে টাটকা সবজি, মাছ কিনি। জেঠুও বলতেন, সাধারণ জীবনযাপন করা অভ্যাস করলে ভবিষ্যতে সবকিছু মানিয়ে নিতে অসুবিধা হবে না। জেঠু-বাবার কথা আজ বর্ণে-বর্ণে সত্য। নিজে ঝাঁটাও ধরি, ন্যাতা দিয়ে ঘরও মুছি। নিজের কাজ নিজে করি। এটাই বাস্তব।
আরও পড়ুন: সেন্সর বোর্ডের মৌখিক আপত্তি, আটকে গেল ‘কাল্পনিক’
আমার বাবার, জেঠুর গাড়ি ছিল। আমি লরেটোতে পড়তাম। মিডলটন স্ট্রিটে স্কুল। সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে বাড়ি থেকে বের হতে হতো। বাবা গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতেন। মাঝেমধ্যে দেরি হয়ে যেত। একদিন বাবাকে ডেকে জেঠু বললেন, ‘বুড়ো, এত রাতে শুটিং থেকে ফিরিস, একটু বিশ্রাম কর। তোকে গাড়ি চালিয়ে ওকে স্কুলে নিয়ে যেতে হবে না। পূর্ণ সিনেমার সামনে দিয়ে ট্রাম চলে, ওকে ট্রামে তুলে দে। ঠিক চলে যাবে। আমরা তো হেঁটে-হেঁটে স্কুলে যেতাম। ওদের সেই অভ্যাসটা করতে দে।’ মাঝে-মাঝে ট্রামে চড়ে স্কুলে গিয়েওছিলাম। পরে অবশ্য বাবা ড্রাইভার রেখেছিলেন। তবে বেশিরভাগ দিন ট্রামে চড়ে স্কুলে যেতাম। মজা লাগত। আমার ছেলেকেও সাধারণভাবে মানুষ করেছি। এখন সৌরভ (বন্দ্যোপাধ্যায়) বড়পর্দা এবং টেলিভিশনের পরিচিত মুখ।
আগেই বলেছি, জেঠু যখন প্রয়াত হন তখন আমার বয়স ১৬। কিন্তু এত অল্প বয়সে তাঁর সান্নিধ্য জীবনের চলার পথে আমাকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে। ওঁর রুটিন, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, ভালোবাসা, আন্তরিকতা, মানুষকে ভালোবাসা, বিপদে পাশে দাঁড়ানো, নীরবে অর্থ সাহায্য ইত্যাদি সকলেই মনে রেখেছেন। একজন প্রকৃত পরিপূর্ণ মানুষ হতে গেলে যেটুকু দরকার তার থেকে বেশিই ছিল আমার জেঠুর মধ্যে।
Edited by Kamalendu Sarkar
Published by Prabuddha Neogi
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন





