Flashback

মৃত্যুর সাত বছরে উত্তমকথা

উত্তমকুমারের প্রয়াণের সাত বছর পর, কয়েকজন সাধারণ দর্শকের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন চলচ্চিত্র সাংবাদিক নির্মল ধর। WBFJA-এর পাতায় রইল সেই প্রতিবেদনের পুনর্মুদ্রণ 

উত্তমকুমার (Uttam Kumar) এখনও সর্বোত্তম। ওঁর তুলনা নেই। ওঁর কোনও বিকল্প হয় না। উত্তমহীন টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়ায় প্রায় সবার মুখেই এই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেল এ বছরেও। মৃত্যুর সাতবছর পরেও উত্তমকুমার জাঁকিয়ে বসে আছেন বাংলা ছবির ব্যবসায়। ‘জীবন তৃষ্ণা’ রিলিজ় করলে দর্শক এখনও উপচে পড়ে। টিভিতে ‘অগ্নীশ্বর’ দেখানোর দিন কলকাতার সিনেমা হলগুলো ছিল ফাঁকা। কয়েক লাখ দর্শকের টিভির সামনে তখন ‘হাউজ়ফুল’ বোর্ড ঝোলানোর মতো অবস্থা।

নতুন, পুরনো সব দর্শকের কাছেই উত্তমকুমারের আকর্ষণ এখনও ঝকঝকে আয়নার মতো। জয়নগর গোচারণ গ্রামের পঁচিশ পেরনো তরুণী আলো বসু সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকে উত্তমভক্ত। বললেন, “বুড়ো না হওয়া পর্যন্ত উত্তমকুমারের ছবি আমি দেখবই।”

আরও পড়ুুন: নর্মদাকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছি: গৌতম ঘোষ

উত্তমকুমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব শুনেই তিনি বেশ উত্তেজিত। খই ফোটার মতো ফুরফুরিয়ে আলো বললেন, “উত্তমকুমারের প্রাণখোলা হাসি, ঠোঁট চেপে কথা বলা, সুচিত্রা সেনের সঙ্গে রোমান্টিক প্রেম এসব মিলিয়ে উত্তম আমার কাছে স্বপ্নের মানুষ।” উত্তমের যে কোনও ছবি এলে এখনও ছুট্টে যান সেই প্রেক্ষাগৃহে। কথার শেষে বললেন, “লিখে দেবেন উত্তমের অগোছালো চুলের বিউটি এখনকার কারও নেই।”

সোদপুরের তরুণ সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য উত্তম সম্পর্কে ততখানি বিগলিত নন। বললেন, “অভিনেতা হিসেবে এমনকিছু ছিলেন না উত্তম। তবে গ্ল্যামার ছিল অসাধারণ, যাকে বলা যায় মেয়েদের মন-জয় করা চেহারা। রোমান্টিক রোল করতেনও ভালো। কিন্তু সিরিয়াস রোলে তাঁকে আমার পছন্দ নয়।”

সুব্রত নিজেও অভিনয় করেন, তাই বোধহয় ওঁর অভিনয় সম্পর্কে খুঁতখুঁতে ভাব। উত্তমকুমারের সব পুরনো ছবির প্রতিই সুব্রতর তেমন আকর্ষণ নেই। বললেন, “আমার কাছে এখনও পর্যন্ত ‘সপ্তপদী’র উত্তমই সেরা।”

শিবপুর দীনবন্ধু কলেজের ছাত্র তাপস মল্লিক উত্তমকুমারের নামে উন্মাদ। যদিও উত্তম-যুগ পেরিয়ে তাঁকে দেখছেন তিনি। তবুও উত্তম তাঁর কাছে উত্তমই। বললেন, “আজকের কেউ নেই যে উত্তমের সামনে দাঁড়াতে পারে। তেমন ব্যক্তিত্ব নেই একজনেরও।’’

Uttam Kumar

তাপস মাত্র খানদশেক উত্তমের ছবি দেখেছেন। এই ক’দিন আগে দেখেছেন ‘জীবন তৃষ্ণা’। তাপসের ইচ্ছে, সুযোগ পেলেই উত্তমের ছবিগুলো সব দেখবেন।

গড়িয়ার কামডহরির তরুণী সুপর্ণা ভট্টাচার্যও উত্তমকুমারের বেশিরভাগ ছবি এখনও দেখে উঠতে পারেননি। ওঁর দেখা প্রথম উত্তম ছবিটি হলো ‘অমানুষ’। স্কুলের নিচু ক্লাসে পড়ে তখন। বড় হয়ে আরও কিছু উত্তমের ছবি দেখেছে সুপর্ণা। ওঁরও বিশ্বাস, উত্তম অদ্বিতীয়। রোমান্টিক রোলে তাঁর জুড়ি নেই। সুচিত্রার সঙ্গে থাকলে তো দারুণ। পাশাপাশি আজকের নতুন কোনও ছবি আর উত্তমকুমারের ছবি এলে সুপর্ণা উত্তমকেই দেখতে যাবেন।

“এই তো ক’দিন আগে টিভিতে ‘অগ্নীশ্বর’ দেখলাম। বলুন, ওঁর তুলনা আছে?” প্রশ্ন করলেন সুপর্ণা।

সত্যিই তুলনার বাইরে এখনও রয়ে গেলেন উত্তমকুমার। বাংলা ছবির প্রবাদপুরুষ অভিনেতা এখনও সবার কাছে উত্তম।

প্রথম প্রকাশ: অমৃত, বৈশাখ ১৩৯৪


Edited by Kamalendu Sarkar
Published by Prabuddha Neogi

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন

WBFJA

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *